Music box

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হয় যেভাবে....মার্কিন ফাস্ট লেড়ি মিশেল ওবামা



 অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি ২০১২-এর শিক্ষার্থীদের সামনে আসতে পেরে আমি শিহরিত হচ্ছি।
আজকে যারা গ্র্যাজুয়েট হচ্ছ, তাদের জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।
এই কঠোর পরিশ্রম তোমরা কেউ কিন্তু একা করোনি। আজ তোমরা সবাই তাঁদের সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছ। তাঁরা হলেন তোমাদের বাবা-মা। সবাই জোরে হাততালি দাও তাঁদের জন্য।
আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি তার কারণ হলো আমার পরিবার। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল দলের কোচ ক্রেগ রবিনসন আমার বড় ভাই। গত বছর সে আমাকে বলে রেখেছিল যে এবার যদি আমি ওদের সমাবর্তনে না আসি, তাহলে মায়ের কাছে আমার নামে নালিশ দেবে!
যুক্তরাষ্ট্রে তোমরা অনন্য নজির স্থাপন করেছ। কৃষি থেকে শুরু করে ন্যানো টেকনোলজি—সব ক্ষেত্রেই তোমরা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছ। তোমরা সব ক্ষেত্রেই অবদান রাখছ; শিক্ষক হিসেবে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে, ক্ষুধা ও রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করে। তাই আমাকে বলতেই হবে, এখানকার পরিবেশটা অনেকটা ক্রেগের মানে আমাদের নিজেদের বাসার মতো। কারণ, এখানকার মূল্যবোধ, চর্চা সবই যেন আমাকে সেই পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে আমরা বেড়ে উঠেছিলাম। আমরা শিকাগোতে থাকতাম। আমি, আমার ভাই, বাবা আর মা। এই চারজন মিলে ছোট্ট এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম আমরা। হ্যাঁ, আমাদের বাসা ছোট্ট ছিল সেটা ঠিক। কিন্তু বাসার সব জায়গায় ছিল আন্তরিকতার ছাপ, ভালোবাসার ছড়াছড়ি। প্রতি রাতেই আমরা খাবার টেবিলে হাজার ধরনের গল্পে মেতে উঠতাম। একসঙ্গে কার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের বোর্ডগেম খেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিতাম আমরা চারজন। আমরা জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে রাঙিয়ে তুলতাম। স্কুলের রিপোর্ট কার্ড পাওয়াটাও ছিল মজার উপলক্ষ। ভালো গ্রেড মানেই ছিল পিৎজা পার্টি। বাবা যখন ঘুমাতেন, তখন তাঁর চশমার কাচে শেভিং ক্রিম লাগিয়ে মজা করতাম আমরা দুই ভাইবোন। কিন্তু বাসায় যে শুধু মজাই ছিল তা নয়। আমাদের পড়াশোনা নিয়ে বাবা-মা সব সময় অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন। কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির অনেক আগেই আমাকে আর ক্রেগকে পড়তে শিখিয়েছিলেন আমার মা। বাসার পাশের স্কুলটিতে মা পড়াতেন। এমনি একদিন ক্রেগের বয়স যখন ১০, তখন ও বাবাকে খুব সহজ একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। প্রশ্নটা ছিল, ‘বাবা, আমরা কি বড়লোক?’
এ কথার উত্তর বাবা দিলেন একটু অন্যভাবে। যেদিন তিনি বেতন পেলেন, সেদিন বেতনের চেকটা ভাঙিয়ে বেতনের সব টাকা বাসায় নিয়ে এসে একটি টেবিলে ছড়িয়ে দিলেন। তা দেখে ক্রেগ যেন খুশিতে আত্মহারা। ‘আমাদের যেহেতু এত টাকা, তাহলে আমরা অবশ্যই অনেক বড়লোক।’ কিন্তু এর পরই বাবা ওই টাকাগুলো আলাদা আলাদা ভাগ করে দেখিয়ে দিতে থাকলেন, এর কোনো অংশটা যায় বাড়িভাড়ায়, কোনোটা যায় গ্যাসে, কোনোটা যায় বাজারসদাই করতে... এভাবে ভাগ করতে করতে আর একটা টাকাও অবশিষ্ট থাকল না। ক্রেগ এটা দেখে অনেক বিস্মিত হলো, আমিও কম বিস্মিত হলাম না!
আমরা এমন একটা পরিবারেই বেড়ে উঠেছি। আমরা হয়তো যথেষ্ট ধনী ছিলাম না। কিন্তু ওই অল্প টাকাতেই নিজেরা ধনীর মতো করে কখনো কোনো কিছুর জন্য আক্ষেপ না করে বাঁচতে শিখেছি। আমি তোমাদের পরামর্শ দেব, সব সময় মনে রাখবে জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, চিন্তা করবে তোমার কাছে কি আছে সেটা, যেটা নেই সেটার জন্য আফসোস করবে না কখনোই।
জীবনে কতটা সুখী হলে, কত আরামে থাকলে তাতে জীবনের সার্থকতা নয়। জীবনের আসল সার্থকতা হলো বিপদের সময় হার মেনে না নিয়ে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানো। বিপদের সময় প্রশ্ন একটাই, ‘যা নেই সেটার কথা ভেবে হার মানবে না, যা আছে সেটাকেই শক্তি ভেবে লড়াই চালিয়ে যাবে।’
নিজের স্বপ্নকে নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে জীবনে। যেটা তোমার স্বপ্নের কাজ, সেটা করার চেষ্টা করবে সব সময়। অন্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যত আনন্দ, তার চেয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আনন্দ অনেক বেশি।
শেষ করব একটি উপদেশ দিয়ে। জীবনে অসম্পূর্ণ কিছু রাখবে না। যখন যেটা করে ফেলতে পারো করে ফেলো। সামনের জন্য কাজ জমিয়ে রাখাটা ঠিক নয়।
যদি কখনো লড়াই করতে হয়, তবে সেটার জন্য ঠিকভাবে প্রস্তুত হও।
যদি কষ্ট পাও, তবে সেটাকে বিলীন হতে দাও।
কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে ক্ষমা চাও।
কাউকে ভালোবাসলে সেটা তাকে জানাও।
কাউকে ভালোবাসলে সেটা শুধু মুখে বলো না, কাজেও করে দেখাও।
শুধু ফেসবুকে লাইক আর টুইটারে শেয়ার করেই বসে থেকো না। কারও পাশে দাঁড়ানো মানে হলো তার কাছে গিয়ে পাশে দাঁড়ান। আমার আজও ভালো লাগে, যখন দেখি পরিবারের সবার ভেতরের টানটা। সবাই সবার সঙ্গে হাসিখুশি মনে কথা বলছে, নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করছে। আর এসব নিয়েই, পরিবারের ভালোবাসা নিয়েই আমি আর ক্রেগ সারা জীবন নিজেদের ধনী ভাবতে পেরেছি। আজকের দিনটায় আমার কামনা, তোমরা যেন সব সময় নিজেকে ধনী ভাবতে পারো। কখনোই নিজেদের ছোট মনে করবে না। যা আছে তা-ই নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে শেখো। তোমাদের অসাধারণ অর্জনের জন্য আরও একবার অভিনন্দন জানাই।
(মিশেল ওবামা মার্কিন ফার্স্ট লেডি। জন্ম ১৭ জানুয়ারি, ১৯৬৪। অরেগন স্টেটঅরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি তে  ২০১২ সালের ১৭ জুন তিনি এই বক্তৃতা দেন)
সূত্র: ওয়েবসাইট
ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ:









বাঙ্গালী সেবা ব্লগস্পট.কম