Music box

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা...





বহু মানুষই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে মেয়েদের এই রোগ বেশি হয়। আবার রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্যও অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হন।
 কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ  অত্যন্ত শক্ত পায়খানা এবং পায়খানা করতে অনেক সময় কষ্ট হয় এবং ব্যথা হয়ে থাকে।
 * পায়খানা হওয়ার পর একটা অস্বস্তি ভাব থাকে, ব্যথা হয় এবং পায়খানা যেন পরিপূর্ণভাবে হয়নি এমন ধারণা হয়ে থাকে।
 * প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তিন দিন ধরে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাত দিন ধরে পায়খানা না হওয়া (সাধারণত এ অবস্থায় আপনার বয়স, খাবারের তালিকা, দৈনন্দিন কার্যকলাপ, নিয়মানুবর্তিতার ওপর ভিত্তি করে একজন মানুষ দিনে তিনবার থেকে শুরু করে সপ্তাহে তিনবার পায়খানা হওয়াকে স্বাভাবিক বলা হয়)।
 * পেট ফোলা, অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি হওয়া অথবা পোড়া পোড়া ঢেঁকুর উঠতে পারে। কী করবেন বাড়িতে খাবারের তালিকায় সামান্য পরিবর্তন করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত শাঁসজাতীয় খাবার (যেমন_বিভিন্ন ধরনের ফল, পাতা শাক, ডাঁটা শাক, সবজি, ছোলাজাতীয় শস্যদানাসমৃদ্ধ খাবার) এবং পর্যাপ্ত পানি (প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে কমপক্ষে ২.৫ লিটার) পানকরলে তা পায়খানাকে নরম করবে এবং নিয়মিত হবে। এর সঙ্গে আরো কিছু বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া উচিত। 
* কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়কারী ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ তাতে আপনার দেহ ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে এবং পরে ঠিকমতো কাজ করবে না। আর যদি ওষুধ খেতেই হয়, তবে প্রাকৃতিক ওষুধ যেমন ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হলে অথবা আপনি যদি গর্ভবতী হন, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন না করাই ভালো। 
* কখনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়কারী ওষুধ হিসেবে কোনো ধরনের তেল গ্রহণ করবেন না।
 * বাচ্চার ক্ষেত্রে বয়স ছয় মাসের কম হলে মায়ের দুধই যথেষ্ট। ছয় মাসের বেশি হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস কিংবা শাকসবজিমিশ্রিত খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু যদি সমস্যাগুলো দুই সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হয় এবং নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
 * কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে জ্বর ও তলপেটে ব্যথা থাকলে। একই সঙ্গে শরীরের ওজন কমে গেলে। 
* পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে। যদি রক্ত পায়খানার গায়ে আটকে থাকে, তবে সেটা খুব ভয়ের নয়; কিন্তু ফোঁটা ফোঁটা আকারে যদি রক্ত যায়, তবে অনেক সময় তা অ্যানাল ফিসার, হেমরয়েড অথবা খাদ্যনালির ক্যান্সারের লক্ষণও প্রকাশ করে।
 * কোনো ওষুধ অথবা ভিটামিন খাওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হলে, তবে তা বন্ধ করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
 * বয়স্ক অথবা শয্যাগত রোগীর সাত দিন ধরে পায়খানা বন্ধ থাকলে। * খাবারের তালিকায় আঁশজাতীয় খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার পরও যদি দুই সপ্তাহে ভালো না হয়। প্রতিরোধ
 * প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। নিয়মিত পায়খানার জন্য দিনে ১৫ মিনিট হাঁটাই যথেষ্ট। * প্রচুর পানি পান, শস্য, দানাদার ও ফলজাতীয় খাবার খেতে হবে। নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। * ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
 * প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পায়খানার অভ্যাস করতে হবে। পায়খানার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, বিশেষ করে সকালের নাশতা এবং রাতের খাবারের পর।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়ঃ
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;
২. বেশি করে পানি খেতে হবে;
৩.দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;
৪. যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
৫. যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
২. পাইলস;
৩. এনালফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে;
৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে;
৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকালমৃত্যু হতে পারে।