Music box

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১২

খেজুর। খেজুর এর পূষ্টিগুণ এবং খেজুরের চাষ..




নামকরণঃ
খেজুর গাছের দ্বিপদ নামের প্রজাতিক অংশ dactylifera এর অর্থ "খেজুর বহনকারী"।
নামটি প্রথম অংশ  প্রাচীন গ্রীক ভাষা dáktulos থেকে এসেছে যার অর্থ "খেজুর" (এর আরেক অর্থ "আঙুল")।
এর আরেক অর্থ এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ "আমি বহন করি"।খেজুর গাছের ফল খেজুর নামে পরিচিত।

 বৈশিষ্ট্যাবলীঃ

ফলটি ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে, যার দৈর্ঘ্য ৩-৭ সে.মি. এবং ব্যাসার্ধে ২-৩ সে.মি. হয়ে থাকে। প্রজাতির উপর নির্ভর করে কাঁচা ফল উজ্জ্বল লাল কিংবা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। একবীজপত্রী উদ্ভিদ হিসেবে এর বীজ ২-২.৫ সে.মি লম্বা এবং ৬-৮ মি.মি পুরুত্বের হয়। প্রধান তিনটি চাষাবাদ উপযোগী খেজুরের মধ্যে রয়েছে - (ক) নরম (বর্হি, হলয়ি, খাদরয়ি, মেদজুল); (খ) অর্ধ-শুষ্ক (দেরি, দেগলেত নূর, জাহদি) এবং (গ) এবং (গ) শুকনো (থুরি)।
   শুকনো  ফলের রকমফেরের ভিন্নতাজনিত কারণে গ্লুকোজ, ফুটকোজ এবং সুক্রোজের ন্যায় বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা নির্ভরশীল।

চারটি পর্যায়ে খেজুরকে পাকানো হয়। আরবী ভাষায় সেগুলো বিশ্বব্যাপী কিমরি (কাঁচা), খলাল (পূর্ণাঙ্গ, ক্রাঞ্চি), রুতাব (পাকা, নরম), তমর (পাকা, সূর্যে শুকানো) নামে পরিচিত।
গাছে ফল উৎপাদনের জন্য সচরাচর ৪ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদন উপযোগী খেজুর গাছে ফল আসতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। পূর্ণাঙ্গ খেজুর গাছে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৮০-১২০ কিলোগ্রাম (১৭৬-২৬৪ পাউন্ড) ফল পাওয়া যায়। বাজারজাতকরণের উপযোগী ফল আহরণের জন্য ফলের শাখাকে পাতলা হতে হয়। এর ফলে ফলগুচ্ছ নুইয়ে পড়ে, নীচের ফলগুলো বড় আকারের হয় এবং বাজে আবহাওয়াপাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।

ইতিহাসঃ
সুদীর্ঘকাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রধানতঃ মধ্যপ্রাচ্যদক্ষিণ এশিয়ার কিয়দাংশে জনসাধারণের কাছে খেজুর প্রধান উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে, খেজুরের চাষাবাদ কিংবা খেজুর গাছের উৎপত্তি সম্বন্ধে সঠিক কোন তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হয় যে, পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোয় সর্বপ্রথম এর চাষাবাদ হয়েছিল।[৩] সম্ভবতঃ প্রাচীনকাল থেকেই মেসোপটেমিয়া থেকে প্রাগৈতিহাসিক মিশরের অধিবাসীরা খ্রিস্ট-পূর্ব ৪০০০ বছর থেকে এ গাছের গুণাগুন সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা এর ফল থেকে মদজাতীয় পানীয় প্রস্তুত করে ফসলের সময় তা পান করতো। খ্রিস্ট-পূর্ব ৬০০০ বছর আগেকার সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে দেখা যায় যে, পূর্বাঞ্চলীয় আরবেও এর চাষাবাদ হতো।
প্রস্তর যুগে পশ্চিম পাকিস্তানের মেরগড় এলাকায়ও খেজুরের চাষাবাদ সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে লিপিবদ্ধ আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সভ্যতা হিসেবে বিবেচিত হরপ্পা এলাকার কথা উল্লেখ আছে খ্রিস্ট-পূর্ব ২৬০০ থেকে খ্রিস্ট-পূর্ব ১৯০০ বছর পর্যন্ত। 
সুত্রঃইউকিপিড়িয়া


খেজুরের পুষ্টিগুণঃ
Nutritional value per serving
Serving size100 grams
Energy১,১৭৮ kJ (২৮২ kcal)
Carbohydrates75.03 g
Sugars63.35 g
Dietary fiber8 g
Fat0.39 g
Protein2.45
Water20.53 g
Vitamin A10 IU
beta-carotene6 μg (0%)
lutein and zeaxanthin75 μg
Thiamine (Vit. B1)0.052 mg (4%)
Riboflavin (Vit. B2)0.066 mg (4%)
Niacin (Vit. B3)1.274 mg (8%)
Pantothenic acid (B5)0.589 mg (12%)
Vitamin B60.165 mg (13%)
Folate (Vit. B9)19 μg (5%)
Vitamin C0.4 mg (1%)
Vitamin E0.05 mg (0%)
Vitamin K2.7 μg (3%)
Calcium39 mg (4%)
Iron1.02 mg (8%)
Magnesium43 mg (12%)
Manganese0.262 mg (13%)
Phosphorus62 mg (9%)
Potassium656 mg (14%)
Sodium2 mg (0%)
Zinc0.29 mg (3%)
Percentages are relative to US recommendations for adults.Source: USDA Nutrient database

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পরিপূর্ণ খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে চিনি, শর্করা ও আ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে শক্ত খেজুর ধুয়ে পরিষ্কার পানিতে পুরো এক রাত ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খেলে উপকার পাবেন। আন্ত্রিক ক্যান্সার প্রতিরোধেও এটি খুবই কার্যকরী। দুর্বল হার্টের মানুষদের জন্য রাতে ভেজানো খেজুর সকালে পেস্ট খেলে তা নিরাপদ ওষুধের মতোই কাজে দেয়। অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া থেকে দ্রুত সারিয়ে উঠতেও এই পেস্ট কার্যকরী। খেজুর দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। চোখের
 খেজুর উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন ফল। এটি কর্মক্ষমতা বাড়ায়। দেহে পুষ্টি উপাদানের শোষণ ও মেটাবলিজমের উন্নতি ঘটায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। পাকা খেজুরে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা ডায়রিয়া থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে সাহায্য করে।মিষ। বছরজুড়ে পাওয়া গেলেও রোজার মাসে এটি খাওয়া পড়ে বেশি। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত বলে ইফতারে খেজুরের উপস্থিতি সব সময়ই দেখা যায়।
পাকা খেজুরের উপরিতল খুবই আঠালো, তাই খুব সহজেই এটি ধুলাবালি এবং জীবা কমিয়ে দেয়। ফলে অন্য খাবার কম খাওয়া হয়। কিন্তু খেজুরের উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি এবং ফ্যাট ঠিকই প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণ করে। এর আয়রন মায়ের বুকের দুধের উত্‍পাদন এবং দেহে রক্ত বাড়ায়। তাই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধে ও প্রতিকারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেজুরের এসিটিলস্যালিসাইলিক এসিড প্রাকৃতিকভাবেই মাইগ্রেনসহ শরীরের অন্যান্য ব্যথা কমায়। তার জন্য, বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধ করে খেজুর। মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা দুর করে সুস্থ জীবন যাপনে সহযোগিতা করতে পারে।খোলা অবস্হায় রাখা খেজুর না খাওয়ায় ভালো।কারন পাকা খেজুর আঠালো ধরনের এটি সহজে ধুলো বালি এবং রোগ জীবাণু দ্বারা দূষিত হতে পারে। এ জন্য সঠিকভাবে প্যাকেট করা খেজুর কেনা উচিত এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।








খেজুরের চারা
খেজুরের চাষঃ
আপনী ও খেজুর গাছ লাগাতে পারেন শখ করে অথবা বানিজ্যিক ভাবে
আমাদের দেশে খেজুরের চাহিদা রয়েছে ৩০ হাজার টন। বিশাল এই চাহিদাকে অনেকাংশই পূরণ করতে পারি দেশে খেজুর গাছের চাষ করে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান খেজুরের চাষ করে বছরে প্রায় ৯০ হাজার টন রফতানি করে থাকে। তাদের দেশের মাটি আমাদের দেশের মাটির তেমন একটা তফাৎ নেই।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মো. মোতালেব হোসেন ভালুকাতে গত নয় বছর ধরে সৌদি খেজুরের চাষ করে আসছেন। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ২০টির মত খেজুর গাছ। তিনি এক একটা গাছ থেকে বছরে ৪৫ কেজি করে খেজুর পাচ্ছেন। মো. মোতালেব হোসেনের মত আমরা খেজুর গাছের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে অবশ্যই আশাতীত ফল পাব।

চাষের নিয়ম কানুন : খেজুর গাছ সাধারণত সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তারপরও বেলে ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে ভাল জন্মে। তবে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

বীজ থেকে চারা উৎপাদন : বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য মাটির তিন ভাগের একভাগ বালি, ছাই, গোবর ও কম্পোস্ট সার এক সাথে মিশাতে হবে। ১০০ কেজি মাটির জন্য ৫০০ গ্রাম রুটোন সার মিলিয়ে তৈরি করতে হবে। বীজ ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর মাটির আধা ইঞ্চি গর্তে বপন করতে হবে। তারপর অল্প পানি দিতে হবে যাতে কাদা না হয়। ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পানি দেবার পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর চারা গজাবে। এরপর ৩ মাস পর পর ১ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি : একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব হবে ১৫ থেকে ২০ ফুট। দিনে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা যাতে রোদ থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তাতে গাছের বৃদ্ধি ও রোগ-বালাই কম হবে। একর প্রতি ১০০ থেকে ১২১টির বেশি গাছ রোপণ করা যাবে না।
গর্ত তৈরি : খেজুরের চারা রোপণ করতে হলে ৩ ফুট গভীর ও ৩ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট আড়াআড়ি গর্ত করে মাদা বানাতে হবে। উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিতে হবে। সম্ভব হলে গর্তের মাটিতে ১/২ দিন রোদ লাগিয়ে নিলে ভাল হবে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ যাতে না হয় তার জন্য মাটির সাথে গুঁড়ো বিষ মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।

সার ব্যবস্থাপনা : প্রতিটি গাছের গোড়ায় সামান্য পরিমাণে হাড়ের গুঁড়ো, প্রতি গর্তে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর সার মেশাতে হবে। চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পরে মিশ্র সার গাছের কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ফুট দূরে মাটিতে প্রয়োগ করে পানি স্প্রে করতে হবে। চারা রোপণের পর চারার গোড়া যেন শুকিয়ে না যায় আবার অতিরিক্ত পানিতে যেন কাদা না জমে যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পরাগায়ণ : খেজুর গাছের পরাগায়ণ পোকা-মাকড়, মৌমাছি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে খুব কমই হয়ে থাকে। হাত দিয়ে অথবা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ণ করতে হবে। বাগানে ১০০টি স্ত্রী গাছের সাথে মাত্র ১টি পুরুষ গাছ থাকলেই পরাগায়ণের জন্য যথেষ্ট। পরাগায়ণ করতে হলে স্ত্রী গাছের ফুল চুরমি ফেটে বাইরে আসার পর পুরুষ গাছের পরাগরেণু পাউডার নিয়ে স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরিতে লাগিয়ে দিয়ে চুরমির অগ্রভাগ রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। ২/৩ দিন পর পর পুনরায় ২/৩ বার পরাগায়ণ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে পুরুষ গাছের পাউডার সৌদি থেকে আমদানি করে ফ্রিজে -৪ থেকে -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ থেকে ৩ বছর সংরক্ষণ করা যায়।

খেজুর গাছ অনুর্বর এমনকি অধিক লবণাক্ত অঞ্চলে হয়ে থাকে। লাগানোর পর ৪-৫ বছর পর থেকে খেজুর দেয়া শুরু হলে এক নাগাড়ে ১৫০ বছর অর্থাৎ বাঁচার আগ পর্যন্ত খেজুর দিয়ে থাকে। খেজুর খুবই পুষ্টিমান হওয়ার কারণে ১ কেজি খেজুর দেহকে ৩ হাজার ৪৭০ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়। খেজুরের গ্লুকোজ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, তামা, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসকরবিক এসিডসহ নানা উপাদানে সমৃদ্ধ। খেজুর গাছ থেকে যেমন রস পাওয়া যায় তেমনি জ্বালানি হিসেবে পাওয়া যায় গাছের কাঠ। খেজুর গাছ লবণাক্ত এলাকা, নদী ভাঙন, কৃষি কাজের উপযোগী আবহাওয়া তৈরিতে সাহায্য করে। বর্তমান দেশের নদী ভাঙন রোধে, তাপমাত্রা কমাতে সর্বোপরি নতুন কৃষি ফসল সৌদির খেজুর গাছ হতে পারে কর্মসংস্থানের মাধ্যম।






www.bangalisheba.blogspot.com