আদা
মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। আদা খাদ্যশিল্পে, পানীয় তৈরীতে, আচার, ঔষধ ও সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহার
করা হয়। এছাড়া্ মুখের রুচি বাড়াতে ও
বদহজম রোধে আদাশুকিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়াও সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস
করে খাওয়াএই ঠান্ডায় আদা ভীষণ উপকারী।
এতে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা দূর
করতে সাহায্য করে।
বমি বমি ভাব দূর করতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। তাই বমি বমি ভাব হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে মুখের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস—এই অসুখগুলোয় সারা শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জয়েন্টে প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করে আদা। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার
পুষ্টিগুণ বেশি।
মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিসজনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা। গর্ভবতী মায়েদের সকালবেলা, বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম দিকে সকালবেলা শরীর খারাপ লাগে। কাঁচা আদা দূর করবে এ সমস্যা।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত
করে, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।
দেহের কোথাও ক্ষতস্থান থাকলে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে আদা। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট, যা যেকোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করে।
এই ঠান্ডায় টনসিলাইটিস, মাথাব্যথা, টাইফয়েড জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, বসন্তকে দূরে ঠেলে দেয় আদা। ওভারির ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আদা।
আমলকি
আমলকী বা 'আমলকি' একপ্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম 'আমালিকা'। ইংরেজি নাম 'aamla' বা 'Indian gooseberry'। আমলকি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica বা Emblica officinalis।
আমলকি আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ফলগুলোর মধ্যে একটি। আমলকি খেলে অনেক রোগের
হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় বা অনেক রোগ সেরে যায়। এ ফলের গুণাগুণ অমৃত সমান-তাই একে অমৃতফল
বলা
হয়ে থাকে। পরিচর্যায় মায়ের মত উপকারী তাই একে ধাত্রীফলও বলা হয়। আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে
আড়াই গুণ, লেবুর চেয়ে সাড়ে চার গুণ, আমের চেয়ে ১০ গুণ, কমলার চেয়ে
১১ গুণ, আমড়ার চেয়ে ৫ গুণ সহ সব ফলের চেয়ে দ্বিগুণ
থেকে ১০০ গুণ বেশি ভিটামনি সি থাকে। আমলকি দামে সস্তা। প্রতিদিন মাত্র একটি আমলকি খেয়ে আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিন সি
এর চাহিদা পূরণ করতে পারি। গাছ থেকে সংগ্রহের পর থেকে ধীরে ধীরে এর ভিটামিন সি নষ্ট হতে
থাকে। তাই আমলকি অবশ্যই তাজা
খেতে হবে। আমলকি শরীর ঠান্ডা রাখে, রক্ত, মাংস ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পায়খানা স্বাভাবিক রাখা ও পুরুষের দেহে বীর্য বর্ধক হিসাবে কাজ
করে। চোখের জন্যও আমলকি
বিশেষ ভাবে উপকারী।
নিম্নে ১০০ গ্রাম আমলকিতে কি পাওয়া যায় তা বর্ণনা করা হলো: প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে আছে পানি-
৯১.৪ গ্রাম, খনিজ -০.৭ গ্রাম, প্রোটিন - ০.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম - ৩৪.০
মিগ্রা, আয়রণ - ১.২ মিগ্রা,
ভিটামিন বি১-১০.০২ মিগ্রা,
ভিটামিন বি২-২০.০৮ মিগ্রা, ভিটামিন সি-৪৬৩ মিগ্রা।
কমলিশাক
কমলিশাক অত্যন্ত সুপরিচিত। শহরে নগরে সর্বত্র কিনতে পাওয়া যায়। গ্রামে, খালে-বিলে ও পুকুরে কমলি লতা ভাসতে দেখা যায়। কমলি ফুল দেখতে সুন্দর। কমলিশাক ভাজা ও ঝোল
রান্না করে খাওয়া যায়। তবে বড় কথা হলো কমলিশাক খুবই উপকারী। কমলিশাক দুই প্রকার। যথা-ডাঙ্গা কমলিশাক
ও জলকমলিশাক ।ডাঙ্গা কমলিশাক গাছ দিয়ে ফসলের ক্ষেতের বেড়া দেয়া হয়। জল কমলিশাক খাওয়া যায়। কমলিশাক পুরুষের শুক্র ও মেয়েদের বুকের দুগ্ধ বর্ধক। রক্ত পরিষ্কার করে এবং নানা প্রকার যৌনব্যাধিতে উপকারী।
কমলি ডাঁটা ছেঁচে রস বের করে রোজ সকালে এক টেবিল চামচ
খেলে শরীর বিষমুক্ত হয়।
কমলির পাতা বেটে ফোঁড়ায় লাগালে পেকে পুঁজ বের হয়ে যায়।ত্বক চিকেন পক্স উঠলে
কমলিশাক খেলে ভেতরের পক্স তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে।
হিস্টিরিয়া রোগে কমলির পাতা ও ডাঁটা বেটে রস খেলে উপকার হয়।
শরীর ও পেট গরম হলে কমলিশাক খেলে ভালো হয়।কমলিশাক দিয়ে সকাল-বিকেল
ভাত খেলে
মায়ের বুকের দুধ বাড়ে।
শিশুদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হলে রাতে দুধের সঙ্গে পাঁচ ফোঁটা কমলি
পাতার রস খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়।
ডায়াবেটিক রোগীরা প্রতিদিন কমলিশাক খেলে উপকার হয়।
যেসব লোকের ফোঁটায় ফোঁটায়
প্রস্রাব হয় সারাক্ষণ,
তারা
কমলিশাক খেলে উপকার হয়।
লটকন
মাহফুজা মোবারক হলুদাভ গোলাকার ফলটিকে ইংরেজিতে
বার্মিজ গ্রেপ বলা হয়। একটা সময় পর্যন্ত লটকন বাংলাদেশে উপেক্ষিত হলেও বর্তমানে
দেশি ফল হিসেবে সুপরিচিত। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি লটকন উত্পাদনের জন্য খুবই
উপযোগী। টকমিষ্টি স্বাদযুক্ত লটকন ফল আমাদের দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। বৃহত্তর
সিলেটবাসী ডুবি বা বুবি নামে চেনে ফলটিকে। ময়মনসিংহে এর নাম কানাইজু এবং চট্টগ্রামে
হাড়ফাটা। এ ছাড়া লটকা, লটকাউ নামেও এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচিত।
পুষ্টিগুণ :
লটকন অম্লমধুর ফল। এ ফলটি 'বি' ভিটামিনগুলোর চাহিদা পূরণে সহায়ক। এতে ভিটামিন বি-১
০.০৩ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন বি-২ রয়েছে ০.১৯ মিলিগ্রাম। খাদ্যমানের দিক দিয়ে পাকা
লটকন যথেষ্ট সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের শাঁসে খাদ্যশক্তি রয়েছে ৯১
কিলোক্যালরি, যা আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া লটকন আমিষ,
চর্বি, লৌহ এবং খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ ফল। লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'সি'।
প্রতিদিন তিন-চারটি লটকন খেলে আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন 'সি'র চাহিদা পূরণ হয়।
ঔষধি
গুণ * লটকন বমিবমি ভাব দূর করে এবং তৃষ্ণা নিবারণ করতে সাহায্য করে
* লটকনগাছের
পাতা শুকিয়েগুঁড়ো করে খেলে ডায়রিয়া উপশম হয় ।
* লটকন ফল মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
*
লটকনগাছের ছাল ও পাতা চর্মরোগ নিরাময়ে সহায়ক ।
* এ ফলের বীজ গনোরিয়া রোগের ওষুধ
হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
* পেটের পীড়া এবং জ্বর নিরাময়ে এ ফলের পাতা ও মূল ব্যবহৃত
হয়। সতর্কতা : বেশি পরিমাণে এ ফল খেলে ক্ষুধামান্দ্যা হতে পারে। পুষ্টিবিদ, ডায়েট
সলিউশন।