Music box

রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১২

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, স্বপ্ন সফল হবেই।





অপরাহ উইনফ্রে
অপরাহ উইনফ্রে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী, ধনী ও কৃষ্ণাঙ্গ উপস্থাপকফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে হলিউডের সবচেয়ে ধনীব্যক্তিত্ব হিসেবে ও নাম লিখিয়েছেন টিভি-ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রে। তাঁর পরেই রয়েছেন অ্যাভাটার ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরুন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টেলর ফেইরি। ২০১০ সালে অপরাহ উইনফ্রের আয় ৩১৫ মিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা জেমস ক্যামেরুন ও টেলর ফেইরির আয় যথাক্রমে ২১০ ও ১২৫ মিলিয়ন ডলার। তাঁর এই বিশ্বখ্যাতি স্বপরিচালিত দি অপরাহ উইনফ্রে শোর জন্য১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া এই শো শেষ হয় ২০১১-তেযুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম

১৯৯৭ সালে ওয়েলেসলি কলেজের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্য দেন
তোমাদের সবাইকে আমার অভিবাদন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছাআজ এখানে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিতএকসময় আমিও এই কলেজে পড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কোনো স্কলারশিপ ছিল না বলে তা হয়ে ওঠেনিআমি তোমাদের নিয়ে সত্যিই গর্বিত
আজ আমি তোমাদের কাছে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরব, যা আমাকে জীবন সাজাতে শিখিয়েছেপ্রথমত, জীবন একটা ভ্রমণওয়েলেসলির একটি দিক আমার খুবই ভালো লাগেএখানে মেয়েদের তাদের জীবনের সবটুকু সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করতে দেওয়া হয়; নিজেদের সত্তাকে চিনতে উৎসাহিত করা হয়আমার এ ব্যাপার বুঝতে বেশ দেরি হয়েছিল যে প্রতিদিনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো দিয়েই নিজেকে আবিষ্কার করে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া যায়আমি বহুদিন ধরে নিজেকে চিনতে পারিনিনিজে যা নই, তা-ই হতে চেয়েছিআমার বয়স যখন ১০, টিভিতে ডায়ানা রসকে দেখে আমি ঠিক তাঁর মতো হতে চাইতামঅনেক দিন পর বুঝলাম, আমি যতই ডায়েট করি, আমার দৈহিক গড়ন ডায়ানার মতো হবে নাটেলিভিশনে কাজ শুরুর প্রথম দিকে আমার বার্তা পরিচালক আমাকে এমন কিছু একটা বানাতে চেয়েছিলেন, যা আমি নইতাঁর মতে, আমার চুল ছিল অতিরিক্ত ঘনতাই আমি নিউইয়র্কের এক বিউটি পারলারে গিয়ে হাজির হলামতারা আমার চুলে যে কসমেটিকস ব্যবহার করল, তাতে আমার মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে যাচ্ছিলকিন্তু তখনকার আমি আজকের অপরাহ ছিলাম নাআমি মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে আমার চামড়া পুড়ে যাচ্ছেপরের এক সপ্তাহের মধ্যে আমার মাথার প্রায় সব চুল পড়ে গেলএকজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যার মাথায় চুল বলতে কিছুই নেই, সেই অবস্থায় আমি টেলিভিশনে উপস্থাপক হওয়ার চেষ্টা করছিলামতখন আমি নিজেকে চিনতে পারি, বুঝতে পারি আমি ডায়ানা রস কিংবা বারবারা ওয়াল্টারস নই, যাঁদের মতো আমি হতে চেয়েছিলাম
এভাবে ভুল করতে করতেই অনেক কিছু শিখেছি আমিঅনেক ভুল করার পর বুঝেছি, নিজেকে বারবারাবানানোর চেয়ে দারুণ একজন অপরাহবানানোই অধিকতর যুক্তিসংগতআমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বারবারাকে দেখে আমি শিখব, কিন্তু আমি অপরাহকে ছাপিয়ে বারবারা হতে চাইব নাআজ আমার এই সাফল্যের মূলে রয়েছে নিজেকে চিনতে পারা, নিজের মতো থাকানিজের গভীরে লুকিয়ে থাকা সত্যকে আবিষ্কার করা এবং সেই সত্যের কাছে দায়বদ্ধ থাকা
আমার বন্ধু মায়ার কাছ থেকে আমি আরেকটি চমৎকার জিনিস শিখেছিএটা তোমরা আয়ত্ত করতে পারলে জীবনের অনেক মূল্যবান সময় বাঁচাতে পারবে, অনেক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেযখন কারও প্রকৃত চেহারা তোমার সামনে উন্মোচিত হবে, সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করোপ্রথমবারেই বুঝে নাও, সতর্ক হও; ২৯ বার দেখার বা সহ্য করার পর নয়বিশেষ করে সম্পর্কের বেলায় এটা খুবই সত্যযখন কেউ প্রথমবার তোমাকে আঘাত করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে, জেনে রাখো, একই কাজ সে আবার করতে পারেহয়তো বারবার করবেতোমার জীবন বিষিয়ে তুলবেতাই প্রথমবারেই সাবধান হওসত্যকে অবলম্বন করে বাঁচোবাকি সবকিছুই তুমি সামলে নিতে পারবেসব বাধাই কাটিয়ে উঠতে পারবেদেরিতে হলেও আমি এটা আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম যে একমাত্র সত্যই আমাকে মুক্তি দিতে পারে
শোককে শক্তিতে পরিণত করোজীবনে অনেক আঘাত পাবে, অনেক ভুল করবেএসব দেখে অনেকে তোমাকে বলবে, তুমি ব্যর্থকিন্তু বিশ্বাস করো, যা তুমি ব্যর্থতা বলে মনে করছ, তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আসলে তোমাকে বলছেন, ‘তুমি ভুল পথে চলছনিজেকে ব্যর্থ ভেবে হতাশ হয়ো নাএটা একটা অভিজ্ঞতা মাত্রএকে কাজে লাগাও
একসময় বাল্টিমোরে আমাকে টেলিভিশনে সাংবাদিকতা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিলআমাকে বলা হয়েছিল, আমি এ কাজের যোগ্য নইকারণ, আমি নেতিবাচক খবর উপস্থাপন করতে করতে কেঁদে ফেলতামধরো, কোথাও আগুন লেগেছে আর সাংবাদিক নিজেই তা বলতে বলতে গৃহহারা মানুষের জন্য কেঁদে ফেলছেব্যাপারটা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল নাকিন্তু যত দিন পর্যন্ত না আমার পদাবনতি হলো আর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো টক শোকরার জন্য, তত দিন পর্যন্ত আমি বুঝতে পারিনি, আমার ভেতরে কী সম্ভাবনা লুকিয়ে আছেসেই ১৯৭৮ সালে যেদিন আমি প্রথম টক শো উপস্থাপনা করি, এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে গিয়েছিলযেন নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলামআমি নিজের ভুলেই সাংবাদিকতা থেকে বাদ পড়েছিলাম, যেটাকে আমার ক্যারিয়ারের এক বিরাট ব্যর্থতা মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সেই ভুল থেকেই টক শোর জগতে প্রবেশ করিআর এই ক্যারিয়ার আমাকে নিঃসন্দেহে ব্যর্থতা দেয়নি!
নিজের ভেতরে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করো
আমার বয়স যখন ১৫, তখন থেকে আমি ডায়েরি লেখা শুরু করি১৫-১৬ বছরের লেখাগুলো সব প্রেমঘটিত জটিলতায় ভরা! কিন্তু যত বড় হয়েছি, তত আমি বর্তমানকে গ্রহণ করতে, ভালোবাসতে শিখেছিআমি বলব, তোমরাও প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকাকে উপভোগ করোযেসব জিনিসের জন্য তুমি জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ, তা একটা ডায়েরিতে লেখোআজ সারা দিনে ঘটে যাওয়া যেসব ঘটনার জন্য তুমি কৃতজ্ঞ, এমন পাঁচটি ব্যাপার লিখে রাখার অভ্যাস করোএতে সারা দিন নিয়ে, এমনকি জীবন নিয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবেতোমার যা আছে, তার প্রতি তুমি যখন মনোযোগ দিতে শিখবে, তখন দেখবে পৃথিবীতে কোনো কিছুর কমতি নেইআর যদি কী নেই, কী পেলাম নাসে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত থাকো, তা হলে কোনো কিছুই আর তোমাকে সুখী করতে পারবে না
জীবনে স্বপ্ন দেখার কোনো সীমা নেইতোমার লক্ষ্যকে ও স্বপ্নকে আকাশ ছাড়িয়ে যেতে দাওকারণ, তুমি যা বিশ্বাস করবে, তুমি তা-ই হবেআমি যখন মিসিসিপির এক অতি সাধারণ ছোট্ট মেয়ে, আমি দেখতাম, আমার দাদি বড় এক ডেকচিতে কাপড় সেদ্ধ করে পরিষ্কার করছেনআমাদের কোনো ওয়াশিং মেশিন ছিল নাজানি না, কেন তখন দাদিকে দেখতে দেখতে আমার মনে হতোযদিও আমি খুব সাধারণ এক কালো মেয়ে, তাও আমি চোখের সামনে যা দেখছিসেটাই আমার জীবনের পরিণতি হবে নাআমি বড় হব, অনেক বড় কিছু হবচার-পাঁচ বছরের আমি সেই গভীর অনুভূতিকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারতাম নাকিন্তু আমি সমস্ত মন দিয়ে তা অনুভব করতাম এবং সেই উপলব্ধিকে বিশ্বাস করে পথ চলতাম
আমি যেখানে জন্মে, যেভাবে বড় হয়ে আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, যত দূর আসতে পেরেছি, এ থেকেই বোঝা যায় অসম্ভব বলতে কিছুই নেইআমার মধ্যে অসাধারণ কিছুই ছিল না; তবু আমি পেরেছি
স্বপ্ন দেখোনিজের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে পিছিয়ে যেয়ো নানিজের চেয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে তোমাদেরজীবনের লক্ষ্যকে যত দূর সম্ভব সামনে নিয়ে যাওনিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, স্বপ্ন সফল হবেইধন্যবাদ