ফল খাওয়ার পরে পানি খাওয়া উচিত নয়। এ কথাটা ঠিক। কারণ, প্রচলিত আছে যে
শরীরে কাটা-ছেঁড়ার পর টক খাওয়া যাবে না। টক খেলে ক্ষত
বাড়বে, সেটা ঠিক নয়। বরং এ সময়ে
ভিটামিন সি খাওয়ার প্রয়োজনটা পড়ে বেশি, তাই এ সময়ে টক খাওয়াটা ক্ষতিকর নয়। খাবার খেতে খেতে
বেশি পানি খেলে হজমে সমস্যা হয়। খাওয়ার মাঝে বেশি পানি খেলে ঠিকমতো খাবার হজম
হয় না। আমরা
অনেক সময় ব্যায়াম করার ঠিক আগে খাই বা খেয়ে উঠেই হাঁটাহাঁটি শুরু করি। কিন্তু যেকোনো
বেলায়ই খাবার খাওয়ার পরপরই হাঁটা ঠিক নয়। দুপুরে পেট ভরে
ভাত খাওয়াটা ঠিক নয়। সকালে ভারী খাবার খেতে হবে। কেননা, এর পরে আমরা
কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরের দিকে হালকা খাবার খেতে হবে। আর রাতের বেলায়
মাঝামাঝি খাবার খেতে হবে। রাতের বেলায় সাধারণত ঘুমানোর দুই থেকে আড়াই
ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে। অনেকেই ফল খেয়ে পানি খান না, কেউ আবার রাতের
বেলায় শাক খান না।আমাদের দেশে এসব নিয়ে
অনেক অপসংস্কৃতি চালু আছে, এসব বিষয় কি আদৌ ঠিক, কীভাবেই বা এমন
ধারণা চালু হলো? এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কী বলেন। জেনে নিন এ
প্রতিবেদনে। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ
সৈয়দা শারমিন আক্তারের পরামর্শ হলো-
ফল খাওয়ার পর এটা
হজম হতে সময় লাগে। আর হজমে যেন অসুবিধা না হয়, সে জন্য যেকোনো ফল খাওয়ার পর পানি না খাওয়াটা ভালো।
সকালের খাবারের পরই চা পান করা ঠিক
নয়। ভরপেট সকালের নাশতা খাওয়ার পরে চা খেলে কিডনিতে সমস্যা হয়। নাশতা খাবার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর চা পান করা উচিত।
চিংড়ি মাছ খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে মনে
করা হয়। সে জন্য অনেকে বাচ্চাদেরও চিংড়ি মাছ
খেতে দেন না। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য চিংড়ি মাছটা
খাওয়া দরকার।
আর বড়দের, যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক আছে, তাদের চিংড়ি মাছ
খেলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু সমস্যা হয়
কোলেস্টেরলের মাত্রা যাদের বেশি, তাদের।
ডায়েট করা মানেই অনেকেই মনে করেন ভারী
খাবার কিংবা ফাস্টফুড একদম খাওয়া যাবে না। এটা ঠিক নয়। ভারী খাবার বা ফাস্টফুডে যেহেতু ক্যালরি
বেশি থাকে, তাই এসব খাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোনো ক্যালরি বেশি খাবার
খাওয়া যাবে না। তবে সালাদ, ফল-এগুলো খাওয়া যাবে।
ভারী খাবার খেয়ে অনেকে শুয়ে থাকতে পছন্দ
করেন। কিন্তু এটা কখনো ঠিক নয়। ভারী খাবার খেয়ে কখনো শুয়ে-বসে কাটানো যাবে না। বরং হাঁটাচলা করতে হবে।
স্ন্যাকস-জাতীয় খাবার খাওয়ার পর মূল
খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
রাতে সাধারণত শাক কিংবা করলা খেতে নিষেধ
করা হয়। এটা ঠিক নয়। রাতে ঘুমানোর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে হাঁটাচলা করলে শাক বা করলা হজম
হতে সমস্যা হয় না।
ঘুমানোর আগে আমরা অনেকে ইসবগুলের ভুসি
খেয়ে থাকি। ইসুবগুলের ভুসি রাতের খাবারের পরে অনেকক্ষণ
ভিজিয়ে না রেখে পানি দিয়ে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলতে হবে।
প্রতিটি মানুষের
খাদ্যাভাস আলাদা। প্রত্যেককে তার নিজস্ব সহনশীল খাবার
খেতে হবে। কুসংস্কার না মেনে প্রত্যেকের প্রতিটি
খাবার, যা তার নিজের জন্য সহনশীল-তা খাওয়া উচিত।
কোনো খাবার কখন খাওয়া
ঠিক নয়, সে সম্পর্কে কি বলেন
বারডেমের পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
আখতারুন নাহার ওরফে আলো।
গর্ভবতী মাকে ডিম খেতে দেওয়া হয় না, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। গ্রামে এখনো অনেকে
মনে করেন, গর্ভবতী মা ডিম খেলে বাচ্চার হাঁপানি হবে। ডাবের পানি খেলে বাচ্চার চোখ ঘোলাটে হবে। ক্ষীরা খেলে বাচ্চার ত্বক ক্ষীরার মতো হবে। কিন্তু এ ধারণাগুলো মোটেই ঠিক নয়। বরং গর্ভবতী অবস্থায় মায়েদের সব ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তবে গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া ঠিক নয়।
বলা হয়ে থাকে, বাচ্চারা চিনি খেলে কৃমি হয়। কিন্তু চিনির সঙ্গে
কৃমির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বাচ্চাদের কৃমি
হয় বড়দের অসচেতনতার কারণে।
ঠান্ডা লাগলে অনেক সময় বাচ্চাদের কলা
খেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ঠান্ডার সঙ্গে কলার কোনো সম্পর্ক
নেই। বরং ঠান্ডা লাগতে পারে ঠান্ডা খাবার খাওয়া কিংবা ঠান্ডা পানি
পান করার মধ্য দিয়ে।
অনেকে বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে মায়ের
বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়। আসলে বাচ্চাদের ডায়রিয়া
হলেও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।
বলা হয়ে থাকে, বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়। কিন্তু এ দুয়ের মধ্যে
কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি খেতে হয় না।
মাংস আর দুধ একসঙ্গে খেতে নিষেধ করেন
অনেকে। অথচ আমরা কোরমা, রেজালা রান্না করে
থাকি, তাতে কিন্তু দই আর দুধ মেশানো থাকে। কাজেই এ কথাটিও ভুল।
টক খেলে গলাব্যথা ভালো হয়ে যায়,
এ কথাটা ঠিক নয়। ভিটামিন সি কিংবা টকজাতীয় খাবারের সঙ্গে গলাব্যথার কোনো সম্পর্ক
নেই।
তেঁতুল খেলে বলা হয়ে থাকে রক্ত পানি
হয়ে যায়। এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। বরং তেঁতুলে রক্তের চর্বি কাটে, ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
জন্ডিস হলে তেল, হলুদ, মরিচছাড়া শুধু সেদ্ধ খাবার দেওয়া ঠিক নয়। বরং জন্ডিসের রোগীদের সব ধরনের খাবার দেওয়া ঠিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার হলে আগের দিনে বলা হতো সারাক্ষণ দুধ খেলে পেটের জ্বালাপোড়া
চলে যায়। কিন্তু এ কথাটা একেবারে ঠিক নয়। এখনকার সময়ে চিকিত্সকেরা বলেন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার হলে
সারাক্ষণ দুধ খেলে তা ঠিকমতো হজম হয় না, ফলে এসিডিটি বাড়ে।
বেশি গরম পড়লে অনেকে ডিম খেতে দেয় না, কিন্তু গরমের সঙ্গে
ডিমের কোনো সম্পর্ক নেই।
তথ্যসুত্রঃপ্রথমআলো
সম্পাদনা-