Music box

শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১২

সবারই দরকার ক্যালসিয়াম....



ক্যালসিয়াম আপনার কতটা প্রয়োজন



অশক্ত হাড়ে জীবনও দুর্বল। ক্যালসিয়াম গড়ে শক্ত হাড় ও দাঁত। সবারই দরকার ক্যালসিয়াম। আলোচনা করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকার ক্যাজুয়ালটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মাহবুব হোসেন মেহদী। লিখেছেন ডা. দিবাকর সরকার
মানুষের দেহের গড় ওজনের প্রায় ২ শতাংশ ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়ামের অধিকাংশই থাকে 
হাড় ও দাঁতে। বাকিটুকু সঞ্চিত থাকে রক্তে। ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছাড়াও হৃৎপিণ্ড সক্রিয় রাখতে, মাংসপেশি এবং স্নায়ুর কাজকর্ম সচল রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহে বিভিন্ন এনজাইমের কার্যপ্রণালি নিয়ন্ত্রণ করে।
আর তাই ক্যালসিয়াম সবার জন্যই প্রয়োজন। তবে বয়সভেদে ক্যালসিয়াম গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু বাড়ন্ত শিশুদের ও বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং বয়স্কদের হাড়জনিত অসুখ থেকে বাঁচতে ক্যালসিয়াম দরকার একটু বেশি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ মহিলা এবং ৭০ শতাংশ শিশু তাদের দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে না বা যে ধরনের খাবার থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়ার কথা তা খায় না বা খেতে পারে না।
সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ হিসেবে ক্যালসিয়াম খেয়ে এর ঘাটতি মেটানো যায়, তবে এভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণের চেয়ে খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা ভালো। কারণ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে যে ধরনের ক্যালসিয়াম মানুষ খায় তা অনেক সময়ই বাড়তি হয়ে দেহের ক্ষতি করতে পারে।

ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার
সূর্যের আলো পরোক্ষভাবে দেহে ক্যালসিয়াম বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামযুক্ত বেশ কিছু খাবার আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য এবং সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই।
* গরুর দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার
* পেয়ারা
* আমলকী
* কচুশাক
* মানকচু
* সবুজ শাকসবজি
* ফলমূল
* মাছ-মাংসের হাড় ইত্যাদি।

ক্যালসিয়ামের অভাব হলে
আসলে ক্যালসিয়ামের অভাব দেহে খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে। তাই ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত সমস্যাকে আমরা নীরব ঘাতক বলে থাকি। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে যেসব সমস্যা বেশি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে_
* হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া বা অস্টিওপোরোসিস।
* মাংস কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাংসপেশির সংকোচন এবং প্রসারণ ব্যাহত হওয়া।
* দেহের কোথাও কেটে গেলে সহজে রক্ত জমাট না বাঁধা।
* স্নায়ুর কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া।
* দেহের বিভিন্ন এনজাইম কাজ করতে না পারা ইত্যাদি।

যাদের বিশেষ ভাবে দরকার
শিশু : মায়ের দুধ গ্রহণ না করা বাচ্চাদের অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম দরকার। কারণ বাজারে বাচ্চাদের দুধে যে ক্যালসিয়াম থাকে, তা তারা সহজে হজম করতে পারে না। তাই প্রত্যেক মায়ের চেষ্টা করা উচিত অন্তত প্রথম ছয় মাস বুকের দুধের বাইরে অন্য কোনো খাবার না দেওয়া।
বাড়ন্ত শিশু : এ সময় শিশুদের দেহের হাড় অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই অধিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
বয়ঃসন্ধির আগে এবং বয়ঃসন্ধির সময় : এ সময় বিভিন্ন হরমোনের কারণে হঠাৎ দেহের বৃদ্ধি সাধিত হতে শুরু করে। তাই এ সময়ে যদি হাড়ের এ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম জোগানের সামঞ্জস্য বজায় না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে হাড় হয়ে যায় দুর্বল, যা পরবর্তীকালে হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়াকে প্রভাবিত করে।
গর্ভবতী মহিলা : গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য মায়ের দেহের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হয়। তাই এ সময় মায়েদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে মায়েদের হাড় দুর্বল হয়ে পরবর্তীকালে হাড়ের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি করে।
দুধ দানকারী মা : আমরা জানি, ক্যালসিয়াম দুধের একটি প্রধান উপাদান। মায়ের দুধের এ ক্যালসিয়ামের উৎস দেহের সঞ্চিত ক্যালসিয়াম, যা প্রধানত থাকে মায়ের হাড়ে। সে জন্য এ সময় মায়েদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
বয়সকালে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেহের সুস্থতা ধরে রাখার জন্য অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

পরিশেষে
বিশৃঙ্খল জীবনযাপন আমাদের হাড় থেকে ক্যালসিয়ামের মাত্রাকে কমিয়ে দেয় এবং হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে। যেমন_
* অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ খাবার
* দিনে ছয়বারের বেশি চা, কফি কিংবা কোলাজাতীয় পানীয় গ্রহণ
* অতিরিক্ত মদ্যপান
* অতিরিক্ত আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ
* কম শারীরিক পরিশ্রম করা
* কম ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা
* ধূমপান ইত্যাদি।