Music box

শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১২

লিভার এর সুরক্ষা ....


লিভারের সমস্যা ও সুরক্ষা


লিভারের একটি খুব সাধারণ রোগ ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভারের কারণ বহুবিধ। ডায়াবেটিক রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ৩৩ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অন্যদিকে ৪৯ শতাংশ ভারতীয়, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, থাইরয়েডের সমস্যা, ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
এটি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত যে ফ্যাটি লিভার লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত অনেকেরই লিভারে ক্রনিক হেপাটাইটিস দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় স্টিয়াটো হেপাটাইটিস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পর ফ্যাটি লিভারই এ দেশে ক্রনিক হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যেসব রোগীর স্টিয়াটো হেপাটাইটিস আছে, তাদের প্রায় ৩০ শতাংশেরই পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিস দেখা দিতে পারে। আর এদের কেউ কেউ লিভার ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে।
বেশির ভাগ ক্রনিক লিভার ডিজিজ রোগীর মতো ফ্যাটি লিভারের রোগীদেরও প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। এদের কেউ কেউ পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা বলে থাকে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এদের প্রায় ৫০ শতাংশের লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-অ্যামাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই_এ কথা বলা যায় না। ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষাটি হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম; যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এ ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। নিশ্চিতভাবে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষাটি হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে ফ্যাটি লিভার ডায়াগনোসিস করা যায়, তেমনি লিভারে স্টিয়াটো হেপাটাইটিস ও সিরোসিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।
ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে লিভারে সিরোসিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা। অতিরিক্ত মেদ কমানো ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার অন্যতম দিক। তবে খুব দ্রুত অপরিকল্পিতভাবে ওজন কমালে তাতে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এর ফলে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ওজন কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পিত ডায়েট কন্ট্রোল, এঙ্ারসাইজ, ওষুধ সেবন কিংবা প্রয়োজনে অপারেশন করা যেতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের কারণ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাটি লিভারের শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বাজারে এমন বেশ কিছু ওষুধ আছে, যা ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় উপকারী বলে প্রমাণিত। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে ইনসুলিন সেন্সেটাইজারস, আরসোডি-অঙ্কিলিক এসিড, মিটাডঙ্নি, প্রোবায়োটিঙ্, ভিটামিন-ই ইত্যাদি।