Music box
শনিবার, ৩০ জুন, ২০১২
শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১২
যেসব কারণে বার্ধক্য দ্রুত আসে...
বার্ধক্য
বয়সজনিত শারীরিক পরিবর্তনবয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ২৫ বছর বয়সে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যে কার্যক্ষমতা থাকে, ৭০ বছর বয়সে তাদের সক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। হৃৎপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং চর্বি জমে রক্তনালি সংকুচিত হতে থাকে। ফুসফুসের গ্যাস পরিবহন এবং বিনিময়ে বিঘ্ন ঘটে। কিডনির রক্ত পরিশোধন করার ক্ষমতা কমে আসে। পরিপাকতন্ত্রের কোষকলার অবলুপ্তি ঘটতে থাকে, হজমের গতি কমে যায়, খাদ্যের পরিপাকে বিঘ্ন ঘটে। শরীর খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। শরীরে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থ এবং ওষুধ বিপাক করার ক্ষমতা যকৃতের হ্রাস পায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এবং আরো বহুবিধ কারণে রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে। অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ দেখা দেয়। বয়সের কারণে কোলাজেন টিস্যুর পরিবর্তন হয়। ফলে ত্বকের মসৃণতা এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। গলার স্বর পরিবর্তন হয়, কানে শুনতে সমস্যা হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। মাংসপেশি এবং জয়েন্টগুলোতে কোষের ক্ষয়ের ফলে শরীরের ওজন কমে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটাচলার শক্তি কমে যায়। মানসিক শক্তি এবং চিন্তাভাবনার সক্ষমতা কমে আসে, মনমেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সাধারণভাবে ব্যবহৃত ওষুধের প্রতিক্রিয়াও পরিবর্তন হয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলো বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা নিয়ে আসে।
যেসব কারণে বার্ধক্য দ্রুত আসে
* খাবার গ্রহণে অনিয়ম। কোমল পানীয়, চর্বিযুক্ত খাবার এবং মিষ্টি-মিঠাই বেশি খাওয়া। খাদ্যতালিকা থেকে ফল ও শাকসবজি কমিয়ে দেওয়া।
* কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা।
* কাজকর্মে এবং ঘরে-বাইরে খুব বেশি চাপে থাকলে শরীরের ক্ষতি হয়। এতে রক্তে স্ট্রেস হরমোন, কটিসোল ও নরইপিনেফ্রিনের পরিমাণ বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে, রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। ফলে বার্ধক্য দ্রুত আসে।
* ঘুমের সমস্যা বা অপর্যাপ্ত ঘুম।
* ধূমপান করলে এবং কড়া রোদে বেশিক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে।
* উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শরীরের বাড়তি ওজন।
করলার পূষ্টিগূন...।
রোগের প্রতিষেধক করলা

কিউকারবিটাসিন নামক একটি দ্রব্যের উপস্থিতির জন্য করলার স্বাদ হয় তিতা। এই সবজিটির রয়েছে রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ের অসাধারণ ক্ষমতা। এশিয়ায় হাজার বছর ধরে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের আদিবাসীরাও অনেক বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস, হাম ও হেপাটাইটিসের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করে আসছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং মাথাব্যথায়ও।
পুষ্টিমানের দিক থেকেও করলা উৎকৃষ্ট সবজি। করলায় আয়রনের পরিমাণ বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপির চেয়ে বেশি এবং এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-এ, সি এবং আঁশ। ভিটামিন-এ ও সি অ্যান্টি অঙ্েিডন্ট; বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে, শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে। এতে আরো রয়েছে লুটিন আর লাইকোপিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খনিজ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা সমাধানে তাই করলা অত্যন্ত উপকারী।
করলা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমায়। এটি রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগার কমে যায়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য করলা ভালো। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
করলা আরো যেসব উপকার করে-
* অ্যালার্জি প্রতিরোধে নিয়মিত করলার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
* বাতের ব্যথায় নিয়মিত করলার রস খেলে ব্যথা কমে।
* আয়ুর্বেদের মতে করলা কৃমিনাশক, কফনাশক ও পিত্তনাশক।
* চর্মরোগেও করলা উপকারী।
* জন্ডিস ও লিভারের অসুখে খাবারে অরুচি দেখা দিলে করলা খেলে রুচি বাড়ে।
* করলার ল্যাক্সেটিভ পায়খানাকে নরম রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* করলা জীবাণুনাশী, বিশেষ করে ই-কোলাই নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর।
* ক্যান্সাররোধী লিভার ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, মেলানোমা ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।
* করলা হেপাটাইটিস-এ, হারপিস ভাইরাস, ফ্লু ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকর।
* রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়; কিন্তু ভালো কোলস্টেরল এইচডিএল বাড়ায়। তাই রক্তচাপ কমাতে করলা কাজে দেয়।
আরহাম চৌধুরী, পুষ্টিবিদ।
শরীরের ওজন বাড়ানো / কমানো...
শরীরের ওজন
ওজন কমানোই যে সব সময় সমস্যা তা নয়, বহু মানুষ ওজনস্বল্পতায়ও ভোগেন। তাঁরা খোঁজেন ওজন
বাড়ানোর উপায়। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কিভাবে দেহের ওজন বাড়াবেন- এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ডা. এ আর এম সাইফুদ্দীন একরাম এবং বারডেম হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ। লিখেছেন তামিম আবদুল্লাহ
গবেষকরা দেখিয়েছেন যাদের ওজন একটা নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকে, তারা সাধারণত সুস্থভাবে বেশি দিন বাঁচে। যাদের ওজন এর চেয়ে বেশি বা কম তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে। অনেকের জন্যই দেহের কম ওজনের অর্থ হলো, তারা কোনো রোগ বা অপুষ্টিতে আক্রান্ত। তারা যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এবং অসুস্থ হলে সেটা পুষিয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সঞ্চয় তাদের নেই। অতিরিক্ত কম ওজন নারীদের সন্তান ধারণক্ষমতাও নষ্ট করে দিতে পারে।
হঠাৎ যদি ওজন কমতে থাকে এবং সব সময় ক্লান্তি বোধ করেন, তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেকে আবার ওজন কমিয়ে রাখতে ইচ্ছা করেই কম খান এবং সব সময় ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকেন- এটাও কিন্তু অসুখ। যার নাম ইটিং ডিসঅর্ডার। এ ক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
আবার কিছু মানুষ সব সময়ই নির্দিষ্ট ওজন এমনিতেই ঠিক রাখতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, তারা অবচেতনভাবেই সব সময় সঠিক পরিমাণ খাবার খায়, যেটা তাদের পর্যাপ্ত ক্যালরি দিয়ে থাকে। গবেষকরা দেখেছেন, এ-জাতীয় মানুষের বিপাকীয় হার খুব ভালো এবং তাদের ক্যালরির অপচয় হয়
কম।
কেন বাড়াবেন ওজন
কখন আপনার ওজন বাড়ানো উচিত? দেহের ওজন খুব বেশি না কম তা জানা যায় শরীরের ঘনত্বসূচক (Body Mass Index) বা বিএমআই দিয়ে। বিএমআই কারো উচ্চতার তুলনায় শরীরের ওজন নির্দেশ করে। নিচের সূত্রটি ব্যবহার করে নিজেই বিএমআই পরিমাপ করতে পারেন।
বিএমআই=ওজন (কিলোগ্রাম)/উচ্চতা2 (মিটার2) [১ মিটার=৩.২৮ ফুট]
সাধারণভাবে বিএমআই ২০-এর নিচে হলে ওজন বাড়ানো উচিত।
আবার যদি শরীর হালকা-পাতলা হয় এবং নিচের লক্ষণগুলো থাকে, তবে ওজন বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
* কাজকর্মে মন্থর হলে ও দুর্বল বোধ করলে ।
* পেট, বাহু ও পায়ের পেশি খুবই পাতলা হলে।
* আবহাওয়ার পরিবর্তন খুব সহজেই অসুস্থ হলে। যেমন- গরম বা ঠাণ্ডায় খুব কাহিল হয়ে পড়লে।
* দেখলে যদি মনে হয় শরীরের সব হাড় বের হয়ে আছে।
* সহজেই ঘনঘন অসুখে আক্রান্ত হলে।
আবার কেউ কেউ রুচি বাড়াতে, খেলাধুলায় উদ্যম আনতে অথবা পেশিবহুল শরীরের আশায় ওজন বাড়ান। দেহের আদর্শ ওজন থেকে কিছুটা কম ওজন থাকা কোনো সমস্যার নয়।
ওজন বাড়াবেন যেভাবে
* ওজন ধীরে ধীরে বাড়াতে প্রথমে লক্ষ্য ঠিক করে নিন। যেমন- প্রতি মাসে এক কেজি (২.২ পাউন্ড)। এ জন্য প্রতিদিন বাড়তি ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোক্যালরি দরকার হবে। ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট যেমন- মাছ, পাতলা মাংস, ডিম, দুধ, টকদই, লাল চালের ভাত, আটার রুটি, শাকসবজি, ফলমূল, প্রচুর পানি ইত্যাদি থেকে এই ক্যালরি খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব।
* প্রয়োজনে কয়েক সপ্তাহের জন্য একটি ফুড ডায়েরি রাখতে পারেন, যা দিয়ে আপনার খাদ্যাভ্যাস ও কোথায় বাড়তি ক্যালরি যোগ করার প্রয়োজন রয়েছে, তা বুঝতে পারবেন।
* ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরিসমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার দরকার। কেবল ফ্যাট ও সুগারসমৃদ্ধ খাবার খাবেন না। বরং দধি, ফল, বাদাম এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খান, যেসব খাবারে ভিটামিন, মিনারেল, পুষ্টি ও ক্যালরির সমন্বয় রয়েছে।
* প্রতিবার খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের সমন্বয় থাকতে হবে। মোটামুটি ৪০ শতাংশ প্রোটিন, ৩০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৩০ শতাংশ ফ্যাট থাকা ভালো।
* যে কারণেই ওজন বাড়াতে চান না কেন, এর জন্য দৈনিক খাবার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর এ জন্য একবারে বেশি না খেয়ে অল্প করে ঘনঘন খেতে হবে। দিনে তিনবেলা মূল খাবারের পাশাপাশি আরো খাবার ও নাশতা খেতে হবে। একবারে বেশি খাবেন না।
* শরীর প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭৫ ক্যালরির মতো পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে। এ হিসাবে একজন সুস্থ-সবল পরিপূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ১৮০০ ক্যালরি পরিমাণ খাদ্য দরকার হয়। তাহলে একবার ১৮০০ ক্যালরি খেলেই তো হওয়ার কথা। কিন্তু শরীর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি খরচ করতে পারে। তার বেশি হলে বাকি ক্যালরিগুলো ফ্যাট হিসেবে শরীরে জমে। এই 'নির্দিষ্ট সময়' বলতে তিন ঘণ্টার কিছু কম সময়কে ধরা হয়। কেননা একবার খেলে সেটা হজম হতে মোটামুটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগার কথা। যদি তিন ঘণ্টায় ৩০০-এর বদলে ৩০০-এর বেশি ক্যালরি গ্রহণ করেন, তাহলে বাড়তি ক্যালরি ফ্যাট হিসেবে জমা হবে। তাই হজমশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত অল্প অল্প করে ঘনঘন খেতে হবে।
* ঘরে তৈরি খাবার খান। কাজে গেলে ঘরের খাবার নিয়ে বের হোন। বাইরের খাবার অনেক সময়ই অস্বাস্থ্যকর হয়। ডিম খেতে পারেন- এটা স্বাস্থ্যকর বাড়তি ফ্যাট যোগ করবে। তেমনি সুজি, সেমাই ও দুধের তৈরি নাশতা খেলে দেহের ফ্যাটের চাহিদা পূরণ হবে।
* অনেকের ধারণা রয়েছে, ব্যায়াম করতে হয় কেবল ওজন কমানোর জন্য। এটা ঠিক নয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার লক্ষ্য যাই হোক না কেন, নিয়মিত এক্সারসাইজ করা জরুরি। এতে হাড় শক্ত হবে, দেহের নমনীয়তা এবং পেশির দৃঢ়তা বাড়াবে। সহজে বলতে গেলে ব্যায়াম যেমন শক্তি বাড়ায় তেমনি পেশি তৈরি করে ওজনও বাড়াতে পারে।
* অনেকের পেশিবহুল স্বাস্থ্য গড়ার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। এ জন্য অভিজ্ঞ ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, যিনি ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী ডায়েট ও এক্সারসাইজের চার্ট তৈরি করে দিতে পারবেন।
* পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুমও ওজন বাড়াতে সহায়ক। তাই বিশ্রাম নিন এবং ঘুমের সমস্যা থাকলে তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দূর করুন।
অসুস্থতা কাটানোর পর ওজন বাড়ানো
অনেকের অসুখ-বিসুখ হয়ে ওজন কমে যায়। এ ক্ষেত্রে তরল খাবার (যেমন- স্যুপ, পাতলা খিচুড়ি), ডিমের তৈরি খাবার, দুধের তৈরি নাশতা, মৃদু ও হালকা স্বাদের খাবার অসুস্থতা-পরবর্তী স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ভালো। পাশাপাশি প্রচুর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। দুধ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ফলের রস খেতে পারেন।
ক্ষুধা বাড়ানোর কিছু উপায়
খাবারে রুচি কম? নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন-
* খাওয়ার আগে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, এতে খাওয়ার রুচি বাড়বে, হার্টও ভালো থাকবে।
* আগে পুষ্টিকর খাবার খান, এরপর পানি ও পানিজাতীয় খাবার।
* মিষ্টি স্বাদের ফল রুচিবর্ধক। তাই এক বা একাধিক ফল ও ফলের জুস খেতে পারেন।
* ক্ষুধা বা রুচিবর্ধক আরো কিছু খাবার আছে। যেমন- আমলকী, কিশমিশ, মিষ্টি, আচার, সালাদ, পেঁয়াজ ইত্যাদি। আপনার যেটা খেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জিংক সাপ্লিমেন্ট খাবার রুচি বাড়ায়।
তাই...
ওজন বাড়িয়ে সুন্দর স্বাস্থ্য তৈরি করতে লেগে থাকতে হবে। শুরুতে বাড়তি ওজনের দেখা মিলতে কিছুটা সময় এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। হাল ছাড়বেন না।
দেহের ওজনের ওপর বংশগতির প্রভাবও রয়েছে।
ওজন বাড়ানোর কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে সঠিক শরীরচর্চা ও পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে আপনিও জেনেটিক প্রভাব এড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন।ওজন বাড়াতে হলে বেশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ ফল : আম, আপেল, কমলা, জাম, লেবু, জাম্বুরা, আনারস, পেঁপে, তরমুজ, কলা, আঙ্গুর ও শুকনো ফল।
কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ শস্যখাদ্য : আটার রুটি, আটার বিস্কুট, বাদামি চাল ও ভুট্টা।
কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ সবজি : ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, গম, মুলা, লেটুস, পালং শাক, টমেটো, কুমড়া, বেগুন, শসা ও সব ধরনের গুঁড়া মসলা।
ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার : মাখন, দুধ, সূর্যমুখী, তিল ও জলপাইয়ের তেল ইত্যাদি।
পুষ্টিকর তরল খাবার : ক্যালরিসমৃদ্ধ পুষ্টিকর তরল খাবারও খেতে হবে। যেমন_দুধ ও তাজা ফলের শরবত।
যা এড়িয়ে চলবেন : তার মধ্যে রয়েছে সাদা চাল, গোল আলু, ময়দা, সুগার, সোডিয়াম (লবণ), অ্যালকোহল, ক্যাফেইন (চা-কফি), নিকোটিন (সিগারেট), ক্যান ফুড, তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার। এড়িয়ে চলার তালিকায় আরো রাখুন পনির, গরু, খাসি ও হাঁসের মাংস, কলিজা, চিনিসমৃদ্ধ খাবার, বিস্কুট, প্রাণিজ ফ্যাট, মুরগির চামড়া, হাইড্রোজেনেটেড ভেজিটেবল অয়েল ইত্যাদি।
রক্ত দান এ আপনার লাভ-ক্ষতি...
স্বেচ্ছায় রক্তদান
বেশি।
* স্ক্রিনিংয়ের কারণে দাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না।* নিয়মিত রক্তদাতার হার্ট ভাল থাকে।
* নিয়মিত রক্তদানে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে দাতার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ঝুঁকি কমে যায়।
* নিয়মিত রক্তদানে দাতার শরীরের কিছু ভালো পরিবর্তন সাধিত হয়। কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে দাতার শরীর থেকে কিছু রক্তপাত হলেও তার কোনো সমস্যা হয় না।
* শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
* কোনো সেন্টারে একবার রক্তদান করলে ওই সেন্টার দাতার প্রয়োজনে যেকোনো সময় রক্ত সরবরাহ করে থাকে।
* রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বাড়ে।
* ধর্মীয়ভাবেও এটি একটি প্রশংসনীয় দান।
বাংগালী সেবা ব্লগস্পট.কম
কলার পুষ্টিগুন......
কলার পূষ্টিগূণ
কলার আদি উৎস দক্ষিণ আফ্রিকা। মনে করা হয়, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আবির্ভূত হওয়া ফল এটি। আজ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় ফলগুলোর একটি কলা। ফলটি প্রচুর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, একটি কলা প্রায় ১০০ ক্যালরি শক্তির জোগান দেয়।
* আয়রনে পূর্ণ, তাই রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত যারা, তারা উপকার পেতে পারে কলা থেকে। পটাসিয়ামে ভরপুর আর লবণের পরিমাণ কম বলে রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে যাদের, তারাও কলা থেকে উপকার পেতে পারে। স্ট্রোক প্রতিরোধেও কার্যকর।
* ধূমপানের বিরুদ্ধে কলা কার্যকর। যারা ধূমপান ছেড়েছে, তাদের দেহকে নিকোটিন ঘাটতির প্রভাব থেকে মুক্তি দিতে কলা কার্যকর।
* অনেক দেশে কলাকে শক্তিদায়ক ফল হিসেবে দেখা হয়, যা গর্ভবতী নারীদের দৈহিক তাপ ও আবেগপূর্ণ অবস্থা প্রশমনে সাহায্য করে।
* কলা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে তা থেকে প্রায় পুরোপুরি ব্যালান্স ডায়েট পাওয়া যায়। দুধের সঙ্গে কলা মিশিয়ে খেলে ক্লান্তিভাব দূর হয়। কলা দেহকে শান্ত করে, দেহের সুগারের মাত্রা ঠিক করে। অন্যদিকে দুধ দেহের পানির ঘাটতি পূরণ করে দেহকে শান্ত করে।
* এ ছাড়া কলা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা যেহেতু পেকটিনসমৃদ্ধ, যা পানিতে দ্রবণীয়, তাই এ দুই ক্ষেত্রেই কলার ভূমিকা সমান দরকারি। তা ছাড়া কলা পেটের ক্ষতিকারক জীবাণুকে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত করতে পারে।* কলা হজমে সাহায্য করে। এসিডিটির জন্য বুকজ্বালা কমাতেও কলা সহায়ক। পাকস্থলীর আবরণীতে নরম কলার প্রলেপ আলসারের অস্বস্তিও কমায়।
* গেঁটেবাতের ব্যথার জন্য কলা উপকারী।
আরহাম চৌধুরী, পুষ্টিবিদ
বাংগালী সেবা ব্লগস্পট.কম
লিভার এর সুরক্ষা ....
লিভারের সমস্যা ও সুরক্ষা
লিভারের একটি খুব সাধারণ রোগ ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভারের কারণ বহুবিধ। ডায়াবেটিক রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ৩৩ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অন্যদিকে ৪৯ শতাংশ ভারতীয়, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, থাইরয়েডের সমস্যা, ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।এটি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত যে ফ্যাটি লিভার লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত অনেকেরই লিভারে ক্রনিক হেপাটাইটিস দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় স্টিয়াটো হেপাটাইটিস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পর ফ্যাটি লিভারই এ দেশে ক্রনিক হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যেসব রোগীর স্টিয়াটো হেপাটাইটিস আছে, তাদের প্রায় ৩০ শতাংশেরই পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিস দেখা দিতে পারে। আর এদের কেউ কেউ লিভার ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে।
বেশির ভাগ ক্রনিক লিভার ডিজিজ রোগীর মতো ফ্যাটি লিভারের রোগীদেরও প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না। এদের কেউ কেউ পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা বলে থাকে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এদের প্রায় ৫০ শতাংশের লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-অ্যামাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই_এ কথা বলা যায় না। ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষাটি হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম; যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এ ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। নিশ্চিতভাবে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষাটি হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে ফ্যাটি লিভার ডায়াগনোসিস করা যায়, তেমনি লিভারে স্টিয়াটো হেপাটাইটিস ও সিরোসিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে লিভারে সিরোসিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা। অতিরিক্ত মেদ কমানো ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার অন্যতম দিক। তবে খুব দ্রুত অপরিকল্পিতভাবে ওজন কমালে তাতে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এর ফলে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ওজন কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পিত ডায়েট কন্ট্রোল, এঙ্ারসাইজ, ওষুধ সেবন কিংবা প্রয়োজনে অপারেশন করা যেতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের কারণ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাটি লিভারের শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বাজারে এমন বেশ কিছু ওষুধ আছে, যা ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় উপকারী বলে প্রমাণিত। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে ইনসুলিন সেন্সেটাইজারস, আরসোডি-অঙ্কিলিক এসিড, মিটাডঙ্নি, প্রোবায়োটিঙ্, ভিটামিন-ই ইত্যাদি।
দাঁতের সঠিক যত্ন.......
দাঁতের সঠিক পরিচচ্ছা
ব্রাশ করেছেন? প্রশ্নটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন সকালে কি আজ ব্রাশ করেছিলেন কি না। আসলে প্রায় প্রতিটি মানুষই ব্রাশ করা বলতে সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করাকেই বোঝেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত অভ্যাসের কারণে বেশির ভাগ মানুষ সকালেই ব্রাশ করেন বা দাঁত পরিষ্কার করেন। যদিও ডেন্টিস্টরা সব সময়ই সকালে ব্রাশ করার চেয়ে রাতে দাঁত ব্রাশ করাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। দিনের বেলা দীর্ঘ সময় মুখ বন্ধ করে থাকার ঘটনা ঘটে না। ফলে খাবারের কণিকাগুলো দীর্ঘ সময় জমে থেকে পচে যাওয়ার সুযোগ কম পায়। কিন্তু ঘুমে অনেকটা সময় মুখ বন্ধ থাকে। এ কারণে মুখের ভেতরে থাকা খাদ্যকণা পচে যাওয়ার সুযোগ পায়। মুখে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ কারণেই রাতে দাঁত ও মুখের যত্ন বেশি নেওয়া দরকার।
কী করবেন?সহজ তিনটি কাজ। ব্রাশ করা, ফ্লস করা ও মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচা করা। কোনটা কতক্ষণ করবেন সেটা বড় বিষয় নয়, বিষয় হলো সঠিকভাবে কাজটি করা। সাধারণত ডেন্টিস্টরা আগে দাঁত ব্রাশ করতে বলেন, এরপর ফ্লস (একধরনের সুতা দিয়ে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করার পদ্ধতি) এবং সবশেষে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচা করতে বলেন। কেউ কেউ আগে ফ্লস করে তারপর ব্রাশ ও কুলকুচা করতে বলেন। যেটাই অনুসরণ করুন ভালোভাবে করুন।
মুখে দুর্গন্ধ এড়াতে হলে?
অনেকেরই ঘুম থেকে উঠে মুখে দুর্গন্ধের কারণে খুব অস্বস্তিবোধ করেন।
রাতে ব্রাশ করলে সাধারণত এ সমস্যাটি কম হয়, নিয়মিত মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচা করলে সমস্যাটি আরো কম হয়। এ দুটো কাজ করার পরও যদি সমস্যা থেকে যায়, তবে ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
সবারই দরকার ক্যালসিয়াম....
ক্যালসিয়াম আপনার কতটা প্রয়োজন
অশক্ত হাড়ে জীবনও দুর্বল। ক্যালসিয়াম গড়ে শক্ত হাড় ও দাঁত। সবারই দরকার ক্যালসিয়াম। আলোচনা করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকার ক্যাজুয়ালটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মাহবুব হোসেন মেহদী। লিখেছেন ডা. দিবাকর সরকার
মানুষের দেহের গড় ওজনের প্রায় ২ শতাংশ ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়ামের অধিকাংশই থাকে
হাড় ও দাঁতে। বাকিটুকু সঞ্চিত থাকে রক্তে। ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছাড়াও হৃৎপিণ্ড সক্রিয় রাখতে, মাংসপেশি এবং স্নায়ুর কাজকর্ম সচল রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহে বিভিন্ন এনজাইমের কার্যপ্রণালি নিয়ন্ত্রণ করে।
আর তাই ক্যালসিয়াম সবার জন্যই প্রয়োজন। তবে বয়সভেদে ক্যালসিয়াম গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু বাড়ন্ত শিশুদের ও বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং বয়স্কদের হাড়জনিত অসুখ থেকে বাঁচতে ক্যালসিয়াম দরকার একটু বেশি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ মহিলা এবং ৭০ শতাংশ শিশু তাদের দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে না বা যে ধরনের খাবার থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়ার কথা তা খায় না বা খেতে পারে না।
সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ হিসেবে ক্যালসিয়াম খেয়ে এর ঘাটতি মেটানো যায়, তবে এভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণের চেয়ে খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা ভালো। কারণ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে যে ধরনের ক্যালসিয়াম মানুষ খায় তা অনেক সময়ই বাড়তি হয়ে দেহের ক্ষতি করতে পারে।
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার
সূর্যের আলো পরোক্ষভাবে দেহে ক্যালসিয়াম বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামযুক্ত বেশ কিছু খাবার আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য এবং সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই।
* গরুর দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার* পেয়ারা
* আমলকী
* কচুশাক
* মানকচু
* সবুজ শাকসবজি
* ফলমূল
* মাছ-মাংসের হাড় ইত্যাদি।
ক্যালসিয়ামের অভাব হলে
আসলে ক্যালসিয়ামের অভাব দেহে খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে না, এর প্রভাব পড়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে। তাই ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত সমস্যাকে আমরা নীরব ঘাতক বলে থাকি। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে যেসব সমস্যা বেশি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে_
* হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া বা অস্টিওপোরোসিস।
* মাংস কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাংসপেশির সংকোচন এবং প্রসারণ ব্যাহত হওয়া।
* দেহের কোথাও কেটে গেলে সহজে রক্ত জমাট না বাঁধা।
* স্নায়ুর কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া।
* দেহের বিভিন্ন এনজাইম কাজ করতে না পারা ইত্যাদি।
যাদের বিশেষ ভাবে দরকার
শিশু : মায়ের দুধ গ্রহণ না করা বাচ্চাদের অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম দরকার। কারণ বাজারে বাচ্চাদের দুধে যে ক্যালসিয়াম থাকে, তা তারা সহজে হজম করতে পারে না। তাই প্রত্যেক মায়ের চেষ্টা করা উচিত অন্তত প্রথম ছয় মাস বুকের দুধের বাইরে অন্য কোনো খাবার না দেওয়া।
বাড়ন্ত শিশু : এ সময় শিশুদের দেহের হাড় অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই অধিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
বয়ঃসন্ধির আগে এবং বয়ঃসন্ধির সময় : এ সময় বিভিন্ন হরমোনের কারণে হঠাৎ দেহের বৃদ্ধি সাধিত হতে শুরু করে। তাই এ সময়ে যদি হাড়ের এ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম জোগানের সামঞ্জস্য বজায় না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে হাড় হয়ে যায় দুর্বল, যা পরবর্তীকালে হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়াকে প্রভাবিত করে।
গর্ভবতী মহিলা : গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য মায়ের দেহের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হয়। তাই এ সময় মায়েদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে মায়েদের হাড় দুর্বল হয়ে পরবর্তীকালে হাড়ের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি করে।
দুধ দানকারী মা : আমরা জানি, ক্যালসিয়াম দুধের একটি প্রধান উপাদান। মায়ের দুধের এ ক্যালসিয়ামের উৎস দেহের সঞ্চিত ক্যালসিয়াম, যা প্রধানত থাকে মায়ের হাড়ে। সে জন্য এ সময় মায়েদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
বয়সকালে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেহের সুস্থতা ধরে রাখার জন্য অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
পরিশেষে
বিশৃঙ্খল জীবনযাপন আমাদের হাড় থেকে ক্যালসিয়ামের মাত্রাকে কমিয়ে দেয় এবং হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে। যেমন_
* অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ খাবার* দিনে ছয়বারের বেশি চা, কফি কিংবা কোলাজাতীয় পানীয় গ্রহণ
* অতিরিক্ত মদ্যপান
* অতিরিক্ত আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ
* কম শারীরিক পরিশ্রম করা
* কম ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা
* ধূমপান ইত্যাদি।
বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২
দেশে এবং জাপানে প্রি প্রশিক্ষন......
প্রি প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হোন
পুরুষদের জন্য
জাপানের সেবামূলক আন্তর্জাতিক
প্রতিষ্ঠান ওইস্কা সাভারের জিরাবোতে একটি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিচালনা
করছে। যেখানে কৃষি বিষয়ে ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রশিক্ষণ
কোর্সে ২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। বছরে দুবার জানুয়ারি ও জুলাইয়ে
ভর্তি করা হয়। নতুন কোর্সে ভর্তি হতে হলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ডাকযোগে বা সরাসরি
আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
ছয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ
এ প্রসঙ্গে জাপানি প্রশিক্ষক
মাসাইউকি আবে জানান, এখানে ছয়টি বিষয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তা হলো: জৈব
উপায়ে ধান ও শাকসবজির চাষাবাদ, কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ ও
ফলের চাষ। এখানে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দুভাবেই শেখানো হয়।
আবেদনের যোগ্যতা ও
নিয়মকানুন: ভর্তি হতে ইচ্ছুক প্রার্থীকে মাধ্যমিক বা সমমানের পাস হতে হবে। বয়স ১৮
থেকে ২৮ বছর ও অবিবাহিত হতে হবে। প্রার্থীর বা পরিবারের আবাদি জমি থাকতে হবে।
মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে আবেদনপত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের তিন কপি ছবিসহ
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র
‘পরিচালক, ওইস্কা প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নরসিংহপুর, জিরাবো, সাভার, ঢাকা’—এই ঠিকানায়
জমা দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। মোবাইল ফোন:
০১৭১৯১৫৫০৫৮।
যেসব সুবিধা রয়েছে: এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ
বিনা খরচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি মাসে একজন শিক্ষার্থীকে ৫০০ টাকা করে ভাতা
দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর মেধার ভিত্তিতে জাপানে সম্পূর্ণ ওইস্কার খরচে ভাতাসহ এক
বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।
কাজের সুযোগ: এ প্রসঙ্গে প্রশিক্ষক
(মাছ চাষ) নারায়ণ চন্দ্র রায় জানান, প্রশিক্ষণ শেষে চাষাবাদের মাধ্যমে স্বাবলম্বী
হওয়ার সুয়োগ আছে। বিভিন্ন উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান ও খামারে এ ধরনের দক্ষ জনবলের
চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, যেমন প্রশিকা, ব্র্যাক, কেয়ার ইত্যাদি
প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
নারীদের জন্য
এদিকে সরকারের
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় সাভারের জিরাবোতে মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে দুটি
বিষয়ে তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একটি হলো মাশরুম ও জৈব চাষাবাদ, অপরটি
হলো খাদ্যরন্ধন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন। প্রতি বিষয়ে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী নেওয়া
হয়। আবেদনপত্র আগামী ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে ডাকযোগে বা সরাসরি জমা দিতে হবে। বছরে
চারবার ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।
যা শেখানো হয়: মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের
প্রশিক্ষক অনুমারাক অনীমা জানান, কোনো রকম রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার ছাড়া কম খরচে
প্রাকৃতিক উপায়ে মাশরুম ও শাকসবজি চাষাবাদের পদ্ধতি এবং খাওয়ার উপযোগী ও অনুপযোগী
মাশরুম চেনার উপায় শেখানো হয় এখানে। আরেক প্রশিক্ষক এরীনা ইসলাম জানান, বিভিন্ন
ধরনের ফাস্টফুড তৈরি, যেমন ব্রেড, কেক, বিস্কুট, বার্গার, পিৎজা, চিকেন ফ্রাই
ইত্যাদি তৈরি বিষয়ে হাতে-কলমে শেখানো হয়। পাশাপাশি খাবার সংরক্ষণ পদ্ধতি, মেয়াদ ও
গুণগতমান উপস্থাপন করে বিক্রয়ের পদ্ধতি নিয়ে পড়ানো হয়। দুটি কোর্সের প্রার্থীদের
প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আবাসিকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতা ও
নিয়মকানুন: প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিনু পারভীন জানান, ভর্তি হতে
ইচ্ছুক প্রার্থীদের মাধ্যমিক বা সমমানের পাস হতে হবে। তবে বিশেষ কিছু বিষয় বিবেচনায়
শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও চলে। বয়সসীমা ১৬ থেকে ৩২ বছর। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের
ক্ষেত্রে ৩৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। আবেদনপত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের তিন কপি
ছবিসহ শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র ‘ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা’, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নরসিংহপুর, জিরাবো, সাভার, ঢাকা, বরাবর
পাঠাতে হবে। মোবাইল ফোন: ০১৭১২১৯৫৬৫৯। এ ছাড়া সরাসরি ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে ১৫
জুলাই আবেদনপত্রসহ সকাল ১০টার আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে।
ভর্তিপ্রক্রিয়া:
মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে। বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে
প্রার্থীর পছন্দ, যোগ্যতা, পারিবারিক ও অন্যান্য সুবিধা বিবেচনা করা হবে।
সুযোগ-সুবিধা: এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ বিনা খরচে
প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী প্রতি মাসে ৩০০ টাকা ভাতা পাবেন।
প্রতিবছর মেধার ভিত্তিতে জাপানে থাকা-খাওয়া ও ভাতাসহ সম্পূর্ণ ওইস্কার খরচে এক বছর
মেয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
প্রশিক্ষণের সুফল: এ প্রসঙ্গে মহিলাবিষয়ক
অধিদপ্তরের পরিচালক কামাল উদ্দিন জানান, মূলধন থাকলে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রার্থীরা
ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মহিলাবিষয়ক
অধিদপ্তর থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়েও ব্যবসা শুরু করার সুযোগ আছে। বিভিন্ন খাবার
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১২
টিপস-ব্যয়াম কতটুকু আপনার প্রয়োজন...
অতিরিক্ত কিছুই ভালো না,
এটা সবাই জানি। শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের বেলায়ও সেটা খাটে। যাঁরা নিয়মিত দৌড়ান বা
জগিং করেন, তাঁদের অনেকে হয়তো ভাবেন আরও একটু বেশি দৌড়ালে বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু
গত ৯ জুন ২০১২, সানফ্রানসিসকোয় আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিনের বার্ষিক সভায়
উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, পরিমিত ব্যায়ামই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং তা দীর্ঘায়ু
লাভে সাহায্য করে। বেশি ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। যাঁরা ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয়
মাইল বেগে সপ্তাহে অন্তত ১ থেকে ২০ মাইল পর্যন্ত দৌড়ান, তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি
সুস্থ ও দীর্ঘায়ু লাভ করেন। আর যাঁরা একেবারেই ব্যায়াম করেন না বা বেশি জোরে ও বেশি
সময় দৌড়ান তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ হাজার ৬৫৬ জন পূর্ণবয়স্ক
ব্যক্তির স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে জানা গেছে। এরা সবাই ১৯৭১ থেকে ২০০২
সাল পর্যন্ত সময়কালে নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন। বলা যায়, পরিমিত মাত্রায় হালকা ব্যায়াম
সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ব্যায়াম কতটা দরকার, তা শরীরই বলে দেবে। শরীর
চাপমুক্তভাবে যতটা গ্রহণ করতে পারে তার বেশি দরকার নেই। সপ্তাহে তিন-চার ঘণ্টা
মাঝারি গতিতে হাঁটা যথেষ্ট বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন।
বাংলাদেশে মাদক........
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের
ওপরে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত আরেক
জরিপে দেখা গেছে, সারা দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৪৬ লাখের বেশি। আর কোনো কোনো
সূত্রমতে, এ সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ কিশোর ও যুবক এবং
নারী মাদকাসক্ত প্রায় দেড় লাখ। হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্রগুলোর তথ্যমতে, ১৮ বছরের
নিচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে এ হার আরও বেশি। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত
থেকে অশিক্ষিত এবং শহর থেকে গ্রামে—কোথাও থেমে নেই মাদকের ভয়াবহ বিস্তার।

প্রথমত, কৌতূহলের বশে বা বন্ধুদের তাড়নায় বা সাময়িক কোনো হতাশার কারণে বা নিছক শখ ও ফ্যাশন হিসেবে প্রাথমিকভাবে কেউ মাদক গ্রহণ করে। এরপর ধীরে ধীরে তার শরীর ও মন মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার (একধরনের রাসায়নিক পদার্থ) ও রিওয়ার্ড সেন্টার (আনন্দ অনুভব করার জায়গা) ক্রমাগত মাদক গ্রহণ করার জন্য শরীরকে বার্তা পাঠায় এবং একপর্যায়ে ব্যক্তিটি পুরোপুরি মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে। এ সময় তার পড়ালেখার মান নষ্ট হয়, কর্মক্ষেত্রে কাজের মান নিচে নেমে যায়, সামাজিকভাবে সে নিজেকে গুটিয়ে রাখে আর পরিবারের মধ্যে এক অচেনা সদস্য হয়ে যায়। বাবা-মা বা পরিবারের নিকটজন কিন্তু তার আচরণে অনেকখানিই আন্দাজ করতে পারেন, কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসকের কাছে তো নেনই না, এমনকি স্বজনদের কাছ থেকেও তার সেই মাদকাসক্ত সন্তানকে লুকিয়ে রাখেন; তার মাদকাসক্তির বিষয়টি নানাভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও এ ধরনের ছাত্রকে পারলে বহিষ্কার করে দেয় আর চাকরিজীবী হলে তার চাকরিটা যায় অথবা সবচেয়ে গুরুত্বহীন দপ্তরে তাকে বদলি করা হয়। বিবাহিত হলে অনেক সময় সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। মাদক গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থের জোগান যখন স্বাভাবিক পথে না আসে তখন চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি নানা ছোট-বড় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে। এরপর শুরু হয় সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়। মাদকের কারণে শরীরের নানা অঙ্গ (লিভার, কিডনি, হার্ট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাদকজনিত মানসিক সমস্যা তৈরি হয়, এমনকি হেপাটাইটিস বি, সি ও এইচআইভি সংক্রমণেরও শিকার হতে পারে সে। চুরি-ছিনতাই যারা করতে পারে না, তারা অর্থের জোগান পেতে নিজেই জড়িয়ে পড়ে মাদক কেনাবেচার ব্যবসায়। এর মধ্যে কোনোভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তিটিকে সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করানো হলে এবং তাতে সে সুস্থ হয়ে উঠলেও তার প্রতি আশপাশের মানুষজন সহজ চোখে তাকায় না, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তাকে এড়িয়ে চলে। এসব কারণসহ আরও নানা কারণে সে আবার আসক্ত হয়ে যেতে পারে।
একদিকে যেমন মাদকের ব্যবহার ও ব্যাপ্তি বেড়ে চলেছে, আরেক দিকে তেমনি মাদকবিরোধী সচেতনতাও থেমে নেই। মিডিয়ায় চলছে মাদকবিরোধী প্রচারণা, পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন। চিকিৎসকেরা এগিয়ে আসছেন, বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোও পিছিয়ে নেই—টক শো হচ্ছে শিডিউল মেনেই। কিন্তু মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না খুব বেশি। কেবল এ কারণে মাদকাসক্তি নিরাময়ে বেগ পেতে হচ্ছে অনেক।
প্রথম দিকে অভিভাবকেরা সন্তানের মাদকাসক্তির বিষয়টি গোপন করেন। কখনো বা
মাদকাসক্তি নিরাময়ে সন্তানকে বিয়ে দিয়ে দেন। দুটি পদক্ষেপই তার সন্তানের জন্য
মারাত্মক। মনে রাখা দরকার, মাদকাসক্তির যথাযথ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে। তাই দেরি না
করে সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে খোলামেলা
আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে স্বজন-বন্ধুদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। মাদকাসক্তি কোনো
অপরাধ নয়, কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি একটি রোগ। সন্তানের অন্য রোগ হলে তার বাবা-মা
যতটা আকুল হয়ে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান, ততোধিক আকুল হয়ে মাদকাসক্তির চিকিৎসা করানো
প্রয়োজন। মাদকাসক্তির যে পর্যায়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে
আসেন, সে সময় তার দেহে ও মনে বিপর্যয় ঘটে গেছে অনেক। হয়তো ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে
পড়েছে অথবা শুরু করেছে মাদকের কেনাবেচার ব্যবসা। এই সময়ের আগেই যদি তাদের চিকিৎসা
করানো হয়, তবে বিপর্যয় অনেকখানিই এড়ানো সম্ভব। আবার অনেক সময় মনে করা হয় যে বিদেশে
পাঠিয়ে দিলে তার মাদকাসক্তি দূর হবে। কিন্তু এটিও একটি ভুল ধারণা। পৃথিবীর সব দেশেই
মাদক তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে চলেছে। এমনকি প্রায় সবখানে আমাদের দেশের চেয়ে বেশি।
আর মাদক গ্রহণের সঙ্গীর অভাব হয় না। মাদকাসক্তি নিরাময়ে বিয়ে দেওয়ার ফল হয় আরও
খারাপ—দাম্পত্য কলহ, মানসিক রোগসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়। 
অনেক সময় দেখা যায়, বাবা হয়তো চিকিৎসকের কাছে তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু মা বারবার সন্তানের মাদকাসক্তির কথা অস্বীকার করে যাচ্ছেন নানাভাবে বিভ্রান্ত করছেন চিকিৎসককে। চিকিৎসা যদিও বা শুরু হয়, অভিভাবকেরা অস্থির হয়ে দিন কয়েকের মধ্যে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চিকিৎসকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পূর্ণমেয়াদে চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। কখনো বা প্রকৃত চিকিৎসার বদলে বাণিজ্যিক প্রচারণা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়েন অভিভাবকেরা। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা যা করতে পারেন তা হচ্ছে, মাদকাসক্তির বিষয়ে তাঁদের মনোভাব পাল্টাতে পারেন। তাঁদের মনে করতে হবে যে এটা কোনো গোপন করার মতো বা লজ্জার বিষয় নয়। লজ্জা করলে বিষয়টি আরও জটিল হবে, যাতে সন্তানের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্ত সন্তানকে রোগী হিসেবে মেনে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, প্রয়োজনে স্বজন ও নিকটজনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে সাহায্য চাইতে হবে। কারও যদি সন্দেহ হয়, তার নিকটজন মাদকাসক্ত, তবে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। সন্তানের প্রতি অযথা রাগ করা চলবে না। মাদকাসক্ত বলে তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না, বাসা থেকে বের করে দেওয়া যাবে না, বরং তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে লুকিয়ে বিদেশে পাঠানো চলবে না, মাদকমুক্ত না করে বিয়ে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসার বিষয়ে ভালোমতো খোঁজখবর নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। যদি তা দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে ধৈর্য ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। কোনো ধাপ বাদ দিয়ে গেলে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ফলে পুনরায় মাদকাসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের প্রতি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সমাজের সবার এবং মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের সুনাম রক্ষার্থে সিদ্ধান্ত নেয় যে সেখানকার কোনো শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে গেলে তাকে বহিষ্কার করা হবে, কিন্তু এতে করে তার জীবনটা ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করে বরং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিকভাবে কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে হেয় না করে, তার পরিবারের প্রতি ঘৃণা-তাচ্ছিল্য না দেখিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
মাদকাসক্তি চিকিৎসার ধাপগুলো বেশ দীর্ঘমেয়াদি। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। অপরিপূর্ণ চিকিৎসার কারণে পুনরায় আসক্ত (রিল্যাপ্স) হতে পারে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি ক্যানসার বা এইডসের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করাতে হবে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর (ইউএনওডিসি) ১৯৮৭ সাল থেকে ২৬ জুন দিনটিকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
ইউএনওডিসি এ বছর যে বিষয়টির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তা হলো, ‘মাদকাসক্তি ও অপরাধ উন্নয়নের জন্য হুমকি’। ইস্যুটি নিয়ে ২৬ জুন জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত হবে থিমেটিক ডিবেট। পৃথিবীর সর্বত্র মাদক তার ভয়াবহ থাবা বিস্তার করে সমাজকে তলিয়ে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে। কলম্বিয়ার মতো রাষ্ট্রে মাদকসন্ত্রাসীরা এতটাই শক্তিশালী যে তারা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমাদের দেশেও আমরা দেখি মাদক ব্যবসায়ীরা কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে, কখনো হত্যা করে ফেলছে প্রতিবাদকারীকে। এই মাদক চক্রের বিরুদ্ধে সবদিক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকের পেছনে সরাসরি হাজার হাজার কোটি টাকা বছরে খরচ হচ্ছে, পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে আরও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির কারণে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে, আবার তাদের চিকিৎসায় পরিবারের টাকা খরচ হচ্ছে এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ কারণেই মাদকাসক্তি ও অপরাধকে উন্নয়নের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, নানা অন্তরায় পাড়ি দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। তাই অগ্রসরমান বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হলে মাদক নামের দানবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং তা এখনই।
কোরিয়ান বাংলা মুভি ''বাংগা বাংগা''
ENJOY KOREAN BANGLA MOVIE ''BANGA BANGA''
part 1 to 8
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM [PART-1].
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM [PART-2].
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM [PART-3]
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM. [PART-4]
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM.[PART-5]
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM.[PART-6]
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM.[PART-7]
WWW.BANGALISHEBA.BLOGSPOT.COM [PART-8]
STAY IN WELL THEN COME BACK YOUR COUNTRY SAFELY
Admin; Bangalisheba.blogspot.com
রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২
স্বপ্ন কথা : ২ - ইউটিউব এর ইতিকথা......
![]() |
| ইউটিউব এর প্রতিষ্ঠাতা |
স্বপ্ন কথা - ২
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাভেদ করিম ১৯৭৯ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে সাদ হারলি ও স্টিভ চেনের সঙ্গে মিলে জাওয়াদ করিম জনপ্রিয় ভিডিও বিনিময় ওয়েবসাইট ইউটিউব তৈরি করেন। এই বক্তৃতা তিনি ২০০৭ সালের ১৩ মে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেন।
সবারই সম্ভবত ইউটিউব নিয়ে পছন্দ-অপছন্দের মিশ্র অনুভূতি আছে। কারণটা মনে হয় ইউটিউব নিজেই। একদিকে ইউটিউব যেমন প্রত্যেককে রাত জেগে নতুন সব ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। ঠিক উল্টোভাবে বলা যায়, রাতের পর রাত এসব ভিডিও দেখার কারণে ইউটিউব তোমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে।
আমি এ সুযোগে, ইউটিউবের কারণে যাদের সিজিপিএ গ্রেড কমে গেছে তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। অনেকে হয়তো জেনে খুশিই হবে যে ইউটিউব তোমাদের থেকে আমার বেশি সময় নষ্ট করেছে! যে কারও থেকে বেশি সময় ভিডিও দেখার জন্য বেশি সময় নষ্ট হয়েছে।
অনেকে খেয়াল করেছ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে যেসব বক্তা আসেন তাদের মধ্যে আমি সর্বকনিষ্ঠ। এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। খারাপ দিক হলো, বয়সের কারণে আমি তোমাদের জীবন সম্পর্কে গভীর কোনো দর্শনের ধারণা দিতে পারব না। না পারার কারণ হিসেবে বলা যায় আমি নিজেই সেই ধারণা খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ভালো দিক হলো তোমরা এবং আমি বয়সে একই প্রজন্মের। তার মানে দাঁড়ায়, আমি যে সুযোগ পেয়েছি, যা শিখতে পেরেছি, তা এখনো প্রয়োগ করার সুযোগ আছে। তিন বছর আগে আমি যে সুযোগ পেয়েছি, যেসব ধারণা প্রয়োগ করেছি তা তোমরা এখনো একইভাবে প্রয়োগ করার সুযোগ ও সময় পাবে।
মিনেসোটার হাইস্কুলে পড়ার সময় আমি পৃথিবীর প্রথম জনপ্রিয় ইন্টারনেট ওয়েব ব্রাউজার মোজাইকের কথা শুনি এবং ব্যবহারের সুযোগ পাই। আমি ম্যাপ নিয়ে ইলিনয় খুঁজে বের করি এবং খেয়াল করি জায়গাটা মিনেসোটা থেকে বেশি দূরে নয়। তখনই আমার মাথায় নতুন চিন্তা ঢুকে গিয়েছিল। জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার যদি আমারই বাড়ির আঙিনার লোকজন উদ্ভাবন করে, তাহলে আমি অন্য কোথাও কেন যাব?
সেই সময় আমি কোনো চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, আমাকে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই হবে। আমি হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলাম কর্তৃপক্ষের চিঠির জন্য। খুব দ্রুতই আমি উত্তর পাই, কিন্তু সে উত্তর ছিল আমার জন্য হতাশাজনক। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে আমি ভর্তি হতে পারব না। ওই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পূর্ণ হওয়াতে আমার ভর্তির সুযোগ নেই। কিন্তু আমি সিরামিকস প্রকৌশল বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাব। আমি বলতে চাই না, সিরামিকস বা মৃৎশিল্পের কোনো ভবিষ্যৎ নেই কিন্তু আমি তো এর জন্য আবেদন করিনি, স্বপ্ন দেখিনি।
পুরোপুরি হতাশ হয়েছিলাম আমি। তো আমি তখন কী করতে পারি? আমি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখি এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা যায় কি না তা জানতে চাই। আমি সেই চিঠিতে লিখেছিলাম, ‘কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমার আবেদনপত্রের কোনো বিষয়ই যেন উপেক্ষা না করা হয়। আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি আমি কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য আগ্রহী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’
আমার আবেদন পুনরায় বিবেচনা করা হয় এবং আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পাই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আমার প্রথম শিক্ষা ছিল কোনো কিছুর প্রতি নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকলে তা চূড়ান্ত ফল আনবেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরেই আমি এক প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট ভিত্তিক অর্থ লেনদেনের কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পাই। মনে হচ্ছিল, চাকরিটা আমার জন্য বড় একটা সুযোগ। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না পড়াশোনা বাদ দিয়ে কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার সুযোগটা গ্রহণ করা ঠিক হবে কি না? আমি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে দুসপ্তাহ সময় নিই। পরে পড়াশোনায় বিরতি দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়াতে পেপ্যাল সদর দপ্তরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমার মতে, যখন ঝুঁকি গ্রহণের সুযোগ পাবে তা অবহেলা করো না।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত মহাসাগরে সুনামি আঘাত আনে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ধারণ করা সুনামির ভিডিওগুলো খুব দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট ভুবনে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ইন্টারনেটে কোনো সক্রিয় সাইট ছিল না, যেখান থেকে ভিডিওগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়, দেখা যায়। এলোমেলোভাবে বিভিন্ন সাইটে অপরিকল্পিতভাবে ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করা হয়, ভিডিও শেয়ার করার কোনো ভালো সাইট ছিল না। ই-মেইলেও সংযুক্ত করে ভিডিওগুলো পাঠানো যেত না। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ভিডিওগুলো দেখার জন্য তোমাকে প্রথমেই একটি ভিডিও প্লেয়ার ইন্সটল করতে হতো। ইন্সটলের পর সবচেয়ে বড় কাজ ছিল বাড়ির লোকজনকে তা চালানো শেখানো। ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার এই সমস্যাগুলো সমাধানের উপযুক্ত সময় ছিল তখন। সুনামির দুই মাসের মধ্যেই ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি ও পেপ্যালের দুজন সহকর্মী ভিডিও শেয়ার ও সংরক্ষণের একটি ওয়েবসাইট তৈরির পরিকল্পনা করি।
আমরা ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের দিনে কাজ শুরু করি। ভ্যালেন্টাইনের দিন বলে কি কাজ বন্ধ থাকবে নাকি? এটাও তো অন্য একটা সাধারণ দিনের মতোই, তাহলে সেদিনই নয় কেন? ২৩ এপ্রিল ইউটিউব ডট কম নামের ওয়েবসাইট আমরা উন্মুক্ত করি। শুরুর দিকে আমাদের ওয়েবসাইট খুব কম জনই ব্যবহার করছে। অন্যদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য আমরা সাইটটিকে নতুন ধরনের ডেটিং সাইট বলে প্রচার করি। আমরা একটি স্লোগানও ঠিক করি: ‘টিউন ইন, হুক আপ’। আমরা কিছু আসল ডেটিং ভিডিও দেখে হতাশ হয়ে উঠেছিলাম। তাই আমরা এখানে সব ধরনের ভিডিও আপলোডের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি। আমরা লস অ্যাঞ্জেলেস ও লাস ভেগাসের মেয়েদের উৎসাহিত করলাম আমাদের সাইটে ভিডিও আপলোডের জন্য। আমরা প্রতি ভিডিওর জন্য তাদের ২০ ডলার পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করলাম। আমাদের এই ঘোষণায় কেউ সাড়া না দিলে পুরস্কার ঘোষণা মাঠে মারা যায়!
আমরা ওয়েবসাইট নিয়ে নতুন চিন্তা শুরু করলাম। পরে জুন মাসেই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে অনেক পরিবর্তন আনলাম। সাধারণ একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করলাম, যেন সব ব্যবহারকারী খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিষ্ঠার ১৮ মাসের মধ্যেই আমাদের ওয়েবসাইট নিয়ে আমরা আলোচিত হই। সাধারণ মানুষের কাছে আমরা খবরের শিরোনাম হই। তাদের অনেকের জিজ্ঞাসা ছিল, কীভাবে এ ধরনের আইডিয়া আমরা কোথা থেকে পেলাম। আমি তাদের সব সময় একটাই কথা বলি। চারদিকে সব সময়ই মেধাবী মানুষ থাকে, খুঁজে বের করতে হয় তাদের।
তোমরা যখন এই হল থেকে বের হয়ে যাবে, তখন একটা কথাই মনে রাখবে। পৃথিবী তোমার জন্য অপেক্ষা করছে নতুন কোনো বড় উদ্যোগ সুযোগ সৃষ্টির জন্য। সবাইকে অভিনন্দন।
সংগ্রহ-প্রথম আলো।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)











